স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপে দিনের প্রথম ম্যাচে আজ ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। ৪ খেলায় ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অসিরা হেরেছে কেবল ভারতের কাছে, সবশেষ পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে এ্যারন ফিঞ্চের দল বেশ আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে সমান ম্যাচে লঙ্কানদের জয় মাত্র একটি, সেটিও আবার দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের কাছে লজ্জার হারে শুরু করা সাবেক চ্যাম্পিয়নদের দুটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট (৪) ভাগাভাগি করে টেবিলের পঞ্চম স্থানে দিমুথ করুণারতেœর দল। বাস্তবতার বিচারে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি ম্যাচেই হারতে পারত তারা! লঙ্কানরা আজ দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে পরীক্ষায় ফেলতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নও থাকছে। স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের থামতে হলে লাসিথ মালিঙ্গা, থিসারা পেরেরা, এ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসের মতো অভিজ্ঞদের একসঙ্গ জ্বলে উঠতে হবে। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের এ পর্যায়ে আলোচিত ইস্যু বৃষ্টি। প্রতিটি দলের জন্য বৃষ্টিই যেন বড় প্রতিপক্ষ। এ পর্যন্ত রেকর্ড চারটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে, যেখানে তিনটিতে টস পর্যন্ত হতে পারেনি। নটিংহ্যামে যার সবশেষ শিকার দুই ফেভারিট ভারত ও নিউজিল্যান্ড। দুট দল তবু পয়েন্ট টেবিলের ওপরের দিকে। পাশাপাশি অবস্থানে। কিন্তু পরিত্যক্ত বাকি তিন ম্যাচের দুটিতেই ছিল শ্রীলঙ্কা। শক্তিধর নিউজিল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটের হার দিয়ে মিশন শুরু করা শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছিল ৩৪ রানের জয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত দুই ম্যাচ থেকে দুটি পয়েন্ট অর্জন, দলটির প্রাপ্তি হয়ত প্রত্যাশার চেয়ে বেশি! মাঠ ও মাঠের বাইরে বড় বাজে সময় যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার। কোচ চন্দ্রিকা হাতুরুসিংহে দায়িত্ব নেয়ার পর খেলোয়াড়-ম্যানেজমেন্ট দ্বন্দ্বটা হয়ে উঠেছে প্রকট। খোলনচে বদলে হঠাৎই অধিনায়ক করা হয়েছে দিমুথ করুণারতেœকে। অভিজ্ঞদের মধ্য আছেন এ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস, উপুল থারাঙ্গা, লাসিথ মালিঙ্গা, এদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। চাপ থাকবে হাতুরুর ওপরও। নিদাহাস ট্রফিতে এবং এশিয়া কাপে বিধ্বস্ত হয় সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাত্র ১৩৬ রানে অলআউট হয়ে লঙ্কানরা হেরেছিল ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। পরের ম্যাচে অবশ্য দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১ রানে অলআউট হয়েও ৩৪ রানে জিতেছিল করুনারতেœর দল। আর বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি। ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক করুণারতেœ সঙ্গী হিসেবে পাবেন ম্যাথুস, কুশল পেরেরাকে। অভিজ্ঞ থিসারা পেরেরার অলরাউন্ড নৈপুণ্যও, বোলিংয়ে মূল ভরসা মালিঙ্গার সঙ্গে থাকবেন ইসুরু উদানা, থিসারা পেরেরা ও জীবন মেন্ডিসরা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার কোন ম্যাচই এখন পর্যন্ত বৃষ্টির কবলে পড়েনি। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের যাত্রা শুরু হয়েছিল দুর্বল আফগানদের হারিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তানের বিপক্ষেও ফিঞ্চদের সে ধারা অব্যাহত থাকেন। মাঝে একমাত্র হার ভারতের বিপক্ষে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের প্রত্যাশিত জয়ে মিশন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় ১৫ রানে। দুর্বল আম্পারিংয়ের কারণে আলোচিত সেই ম্যাচে ৭৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন স্টিভেন স্মিথ। ৯২ রান করেন টেলএন্ডার নাথান কুল্টার নাইল। ৫ উইকেট নিয়ে অসামান্য অবদান রাখেন বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক।
কিন্তু ওভালে বিশ্বকাপে এবার প্রথম ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচে ভারতের কাছে ৩৬ রানে হারে অসিরা। ভারতের ৩৫২/৫-এর জাবে ৩১৬ রানে অলআউট হয় এ্যারন ফিঞ্চের দল। এদিন হাফসেঞ্চুরি হাঁকান স্মিথ-ওয়ার্নার দু-জনেই। তবে ওয়ার্নারের ৫৬ রান করতে ৮৪ বল মোকাবেলা ছিল বড় রহস্যময়! পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১১১ বলে ১০৭) হাঁকানো ন্যাটা ওপেনার আজ শ্রীলঙ্কার জন্য রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেন। ৩০৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়া অসিরা পায় ৪১ রানের দারুণ জয়। টপঅর্ডারে ওয়ার্নারের সঙ্গে আছেন অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভেন স্মিথ, উসমান খাজা। মিডলঅর্ডারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, এ্যালেক্স ক্যারি, মার্কাস স্টয়নিস। বোলিংয়ে মিচেল স্টার্ক-নাথান কুল্টার নাইলের সঙ্গী প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিঞ্চ বলেন, ‘দুই জয়ে দারুণ শুরুর পরও আমরা ভারতের বিপক্ষে সেটি ধরে রাখতে পারিনি। টপঅর্ডারে প্রত্যাশিত রান আসেনি। তবে আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটিং ভাল হয়েছে। বোলাররাও ভাল করেছে। আমরা জয়ের এ ধারা অব্যাহত রাখতেই মাঠে নামব।’
গত বছর কেপটাউন টেস্টে বহুল আলোচিত বল টেম্পারিংয়ের কারণে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্মিথ ও ওয়ার্নার। দুই তারকাকে হারিয়ে মাঠের ক্রিকেটেও বেসামাল হয়ে পড়েছিল অসিরা। হারছিল একের পর এক সিরিজ। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। ভারতের মাটিতে ভারতকে আর আমিরাতে পাকিস্তানকে হারিয়েছে স্মিথ-ওয়ার্নারকে ছাড়াই। আবার প্রত্যাবর্তনে দুই তারকাই হয়ে উঠেছেন দলের অন্যতম ত্রাতা। অস্ট্রেলিয়ার জন্য বাড়তি পাওয়া এই দলের পাঁচ সদস্য গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন- তারা হলেন অধিনায়ক ফিঞ্চ, তুখোড় স্মিথ-ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কামিন্স আর স্টার্ক। ১৯৭৫ থেকে এ পর্যন্ত মুখোমুখি মোট ৯৬ ওয়ানডের ৬০টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার। ৩২টিতে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। পরিত্যক্ত ৪।
সবশেষ ২০১৬-এর আগস্ট সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে সিরিজ জিতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ম্যাচে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সিরিজে নেতৃত্ব দেয়া ওয়ার্নার। আর বিশ্বকাপ ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৭ দেখায় ৬ জয় অস্ট্রেলিয়ার। এক জয় শ্রীলঙ্কার। সিডনিতে গত বিশ্বকাপে (২০১৫) ম্যাথুসের শ্রীলঙ্কাকে ৬৪ রানে হারিয়েছিল মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৫৩ বলে ১০২)।