শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ নামের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ হলো, কমিশন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে প্রথম দরপত্রে ইচ্ছামাফিক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এতে অংশ নেয়নি নামি কোনো প্রতিষ্ঠান। প্রথমে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান না করে সরাসরি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা উপকরণ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, এর উদ্দেশ্য ছিল পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া। পরে এ পরিকল্পনা বাদ দিয়ে ‘ই-জিপি’ (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) ব্যবস্থায় দরপত্র আহ্বান করা হয়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযুক্ত তিন হাজার ৩৪০টি স্কুল এবং বিদ্যুৎ সংযোগহীন আরো প্রায় পাঁচ হাজার বেসরকারি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। স্কুলগুলোকে আধুনিক করার জন্য, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিসচেতন ও প্রযুক্তিঋদ্ধ করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। তবে বাস্তবায়নের সমস্যা খুবই পরিচিত, সরকারি প্রকল্পে বরাবর যা হয়ে থাকে অনিয়ম, দুর্নীতি।
গত এপ্রিলে ই-জিপি ব্যবস্থায় চারটি প্যাকেজে ১৩ হাজার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর কেনার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে দরদাতার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়নি। অথচ এটি দরপত্রের অন্যতম শর্ত। ১৪ মে দরপত্র খোলা হয়। দেখা যায়, দুটি প্যাকেজের জন্য কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। বাকি দুটি প্যাকেজের জন্য দুটি দরপত্র জমা পড়েছে। যারা জমা দিয়েছে তাদের পণ্য সরবরাহের অভিজ্ঞতা নেই; দরও অনেক বেশি ধরেছে। ফলে ১০০ কোটি টাকার এ দুই প্যাকেজে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি হতে যাচ্ছে। প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) ব্যাপারে অভিযোগ হলো, তিনি নিয়োগ পেয়েই পছন্দের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার তৎপরতা শুরু করেন। এখনো ওই সব প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্যেই একটি প্যাকেজে পাঁচটি শিক্ষা উপকরণ একসঙ্গে কেনার কথা থাকলেও তিনি আলাদা প্যাকেজে উপকরণ কেনার দরপত্র আহ্বান করেন। এতে উপকরণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। খরচও বেশি হবে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বাবদ খরচ কমার কথা। সে বিবেচনায় প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের চেয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্লাসপ্রতি খরচ ৩০ হাজার টাকা বেশি ধরা হয়েছে। এর পেছনেও কমিশন বাণিজ্যের উদ্দেশ্য রয়েছে।
শিক্ষার প্রসার ও আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিসচেতন ও প্রযুক্তিঋদ্ধ করার যেকোনো উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে তার বাস্তবায়ন সুষ্ঠু হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা সেদিকে নজর দেবেন বলে আশা করি।