॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
রমজান মাসের ফযিলত, এ মাসের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত এ সব কিছু হাছিল করার জন্যে নবী (সাঃ) কয়েকটি শর্তারোপ করেছেন যে শর্তগুলো যে মু’মিনের মধ্যে পাওয়া যাবে ঐ মু’মিনই শুধু রামাদান মাসের ফযিলত, রহমত, বরকত ও মাগফিরাত পাবেন। আর এ শর্তগুলো যে মু’মিনের মধ্যে পাওয়া যাবে না সে মু’মিন শুধু কষ্ট করেই রামাদান মাসের সিয়াম (রোজা) পালন করবেন, তারাবীহ্ আদায় করবেন কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে কোন প্রকার ফযিলত, রহমত, বরকত ও মাগফিরাত পাবেন না। তাহলে ঐ শর্তগুলো জানা আমাদের জন্যে খুবই জরুরী। নবী (সা:) আমাদেরকে যেভাবে সিয়াম (রোজা), কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ্) ও লাইলাতুল ক্বাদর করতে বলেছেন, আমাদেরকে ঠিক সেভাবেই পালন করার চেষ্টা করতে হবে। নবী (সা:) যে কয়েকটি শর্তারোপ করেছেন এরকম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক শর্ত হলো ৩ টি আর তা হলো ১. ঈমান ২. এহতেছাব, ৩. হালাল উপার্জন। এ তিনটি বিষয় সম্পর্কে আমরা আলোচনা করবো ইন্শা’আল্লাহ।
রামাদান মাসের খাছায়েছ তথা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এ মাসে আল্লাহ তা’য়ালা ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত দান করেছেন যে গুলো অন্য কোন মাসে দেন নাই। সহীহ আল বোখারী ও সহীহ আল মুসলিমে বর্ণিত ‘মুত্তাফাকুন আলাইহি’ হিসেবে হাদিসটিতে রাসূল (সাঃ) রামাদান মাসের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন আর সেগুলো হলো ১. ফরজ সিয়াম (রোজা), যা আল্লাহ তা’য়ালা কেবল রামাদান মাসেই উম্মতে মোহাম্মদীকে দান করেছেন, ২. ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহ এর নামাজ। ক্বিয়ামুল লাইল অন্যান্য মাসেও আছে কিন্তু রামাদান মাসের ক্বিয়ামুল লাাইলের গুরুত্বটা আলাদা। এই মাসের ক্বিয়ামুল লাইলকে/ক্বিয়ামে রমাদানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ৩. লাইলাতুল ক্বদর, যেটি রামাদান মাস ব্যতীত বছরের আর কোন মাসে পাওয়া যায় না। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিস রাসূল (সাঃ) এ ৩ (তিন) টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে এক বাক্যে না বলে তিনটি বাক্যে আলাদা আলাদাভাবে বলেনঃ “যে ব্যক্তি রামাদান মাসে সিয়াম (রোজা) পালন করবেন ঈমান ও এহতেছাবের সাথে, আল্লাহ তা’য়ালা তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”। “যে ব্যক্তি রামাদান মাসে ক্বিয়ামুল লাইল (তারাবীহ এর নামায) আদায় করবেন ঈমান ও এহতেছাবের সাথে, আল্লাহ তা’য়ালা তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”। “যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রে ক্বিয়ামুল লাইল করবেন ঈমান ও এহতেছাবের সাথে, আল্লাহ তা’য়ালা তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”। শুধু সিয়াম তথা রোজা পালন করলেই হবে না, শুধু ক্বিয়ামুল লাইল (তারাবীহ এর নামাজ) পড়লেই হবে না, শুধু লাইলাতুল ক্বাদরে ক্বিয়ামুল লাইল পড়লেই হবে না, মাগফিরাত পাবার জন্যে এ দুইটি জিনিস ঠিক থাকতে হবে। যদি এ দুটি জিনিস ঠিক না থাকে তাহলে তিনি রোজা পালন করবেন, তারাবীহ এর নামাজ আদায় করবেন, লাইলাতুল ক্বদরে ক্বিয়াম করবেন কিন্তু কোন ফায়দা পাবেন না, গুনাহ থেকে মাফও পাবেন না। তিনটি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। তিনটির ক্ষেত্রেই রাসূল (সাঃ) শর্ত দিয়েছেন দুটি, একটি হলো ঈমান অপরটি হলো এহতেছাব। ঈমান ও এহতেছাবের সাথে সিয়াম (রোজা) পালন করতে হবে, ঈমান ও এহতেছাবের সাথে ক্বিয়াম (তারাবীহ) আদায় করতে হবে, ঈমান ও এহতেছাবের সাথে লাইলাতুল ক্বাদরে ক্বিয়াম আদায় করতে হবে। তাহলে আমাদেরকে বুঝতে হবে ঈমান ও এহতেছাব কী জিনিস?
ঈমানের ব্যাপারে আমরা কম বেশী জানি, কারণ আমরা সবাই ঈমানদার, মু’মিন। কিন্তু ঈমানের দাবি করা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে আমরা শির্ক করে থাকি, যে শির্ককে আমরা শির্ক বলে জানি না বা র্শিক বলে মনে করি না অথচ সেগুলো আমাদের জন্যে র্শিক। হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিস যে হাদিসকে আমরা ‘হাদীসে জিবরাঈল’ বলে জানি, একবার হযরত জিবরাঈল (আঃ) মানুষের আকৃতি ধারণ করে নবী (সাঃ) এর কাছে আসলেন যেখানে অনেক সাহাবায়ে কেরাম বসা ছিলেন। এসে হযরত জিবরাঈল (আঃ) নবী (সাঃ) কে যে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন তন্মধ্যে একটি ছিল, ‘আমাকে বলেন ঈমান কাকে বলে? ঈমান কী জিনিস’? হযরত জিবরাঈলের (আঃ) এ প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হলো উম্মতকে, সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দেয়া। নবী (সাঃ) এর উত্তরে বললেন, ঈমান হলো বিশ্বাস স্থাপন করা, আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি, সকল ফেরেশতার প্রতি, সকল আসমানী কিতাবের প্রতি, সকল রাসূলের প্রতি, আখেরাতের প্রতি ও তাক্বদীরের প্রতি। উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বললেন, আপনি সঠিক কথা বলেছেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারি ঈমান হলো এ ৬টা জিনিসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা যেভাবে কোরআন ও সুন্নাহ আমাদেরকে বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছে। (অসমাপ্ত)