জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের এক সপ্তাহ ॥ সংস্কার কাজে ধীরগতি, স্থবির জকিগঞ্জ

60

জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক সংস্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত ৫ মে থেকে শ্রমিক সংগঠনগুলো জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক সংস্কারের দাবীতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে প্রধান দুটি সড়কে যানাবাহন চালানো বন্ধ রেখেছে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনতা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। ছোট পরিবহনগুলো চলাচল করলেও ভাড়া তিনগুণ। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে সরকারকে। দীর্ঘদিন থেকে জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কের বেহাল দশা। জকিগঞ্জ উপজেলা থেকে জেলা শহর পর্যন্ত সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন লোকজন চলাচল করতে হয়। সংস্কারের অভাবে পুরো সড়কটি ছোট বড় খানাখন্দে এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানের পিচ উঠে খন্ড খন্ড পুকুরে রূপ নিয়েছে। ভাঙ্গাচুড়া সড়কের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে অনেকজন নিহত ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সড়ক সংস্কারের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট থেকে শুরু করে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। উপজেলাবাসী বিভিন্ন ব্যানারে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, অবরোধ ও স্মারকলিপি প্রদান করে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কারের দাবি করেন।
গত বছরের শুরুর দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক উন্নয়নে একনেকে ১৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কাজ হচ্ছে হবে বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন সওজ কর্মকর্তারা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সিলেট- গোলাপগঞ্জ-চারখাই-জকিগঞ্জ মহাসড়ক’ উন্নয়ন কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের জন্য ১৮৬ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়ে টেন্ডার আহ্বান করে সওজ। কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএনসিজেবি। কাজ পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্চ মাসে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের চারখাই অংশে কিছু কাজ করলেও ভয়াবহ ভাঙন কবলিত স্থানে কোনো কাজ করেনি। এনিয়ে পূর্ব সিলেটের লক্ষ লক্ষ মানুষ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেন। বাধ্য হয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত সপ্তাহে দুএক জায়গায় কাজ শুরু করেছে। তবে কাজ অনেকটা ধীরগতিতে চলছে বলে জানান সাধারণ নাগরিকরা। প্রতিদিন এ সড়কগুলো দিয়ে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়লেখাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি শুল্ক ষ্টেশনের মালামাল নিয়ে গাড়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা করে।
ভুক্তভোগী জনসাধারণ জানান, জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক সংস্কারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সওজের উদাসীনতার কারণে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সাধারণ মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনগুণ ভাড়ায় কার, লাইটেস, পিকআপ, সিএনজি-অটোরিকশায় জকিগঞ্জ থেকে জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে হচ্ছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পরচক বটরতল থেকে শাহবাগ, বাংলাবাজার, সড়কের বাজার, আটগ্রাম বাসস্টেশন, কালিগঞ্জ বাজার, সোনাসার বাসস্টেশন, বারঠাকুরী, শরীফগঞ্জ বাজার, গঙ্গাজল বাজার, বাবুর বাজার, থানাবাজার ও ভরণসহ শতাধিক স্থান খানাখন্দে ভরপুর। এসব স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই খানাখন্দে ভরপুর স্থানে যানবাহন বিকল হয়ে ঘটে দুর্ঘটনা।
জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সড়কটির সংস্কার কাজের উদ্বোধন করার পরও ধীরগতিতে কাজ চলছে। এতে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত মানুষ এ সড়কের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ভাঙ্গা সড়কের কারণে আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ কিছুটা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফলিক মিয়া বলেন, শাহগলী থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক যানচলাচলের উপযোগী নয়। তাই পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এরআগেও আমরা একাধিকবার সড়ক সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছি পরে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে প্রত্যাহার করেছি কিন্তু কোন ফল পাইনি। পরিবহন দুর্ঘটনা ঘটে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। ভাঙ্গা সড়কের কারণে মালিক পক্ষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সড়ক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএনসিজেবি’র পরিচালক লুৎফুর রহমান বলেন, আমরা কাজটি পেয়ে প্রথমেই সড়কটির মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত স্থান চারখাই ও বাইপাস সংলগ্ন সড়কের একটি অংশে কাজ করেছি। যেভাবে কাজ পেয়েছি তার চেয়েও বেশি কাজ করতে হয়েছে। সড়কটির উন্নতমানের কাজ করতে হলে ঠিক অনুরূপ এভাবে কাজ করতে হবে। এ কারণে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ অংশে কাজ ধরতে পারছি না। তবে শাহবাগের পূর্ব থেকে ও গঙ্গাজল এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামান্ত বলেন, সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি।