কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট সদর ইউপির গোসাইনপুর গ্রামের মসজিদে ইমাম রাখাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সমর্থিত মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষে সৌদি ফেরত প্রবাসী মোহাম্মদ আলী(৬০) নিহতের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের শ্যালক কানাইঘাট সদর ইউ.পির বিরদল পুরানফৌদ গ্রামের মৃত মাহমুদ আলীর পুত্র ইউ.পি সদস্য ফজলূর রহমান বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৩। মামলার অধিকাংশ আসামী জামায়াত শিবির সমর্থিত বলে জানা গেছে। পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী গোসাইনপুর গ্রামের জামায়াত নেতা মাদ্রাসা শিক্ষক মাও: জামাল উদ্দিন (৫০), অবসর প্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক বশির আহমদ (৬৫) অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান (৬৫) উরফে আখলু মিয়া ও তার পুত্র মাসুম আহমদ(২৫) মৃত সামছুল হকের পুত্র আনোয়ার হুসেন (৪৮) ও ইসলাম উদ্দিনের পুত্র আবিদুর রহমান (২৫) কে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের গতকাল শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে সোপর্দ করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সবাই জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই পান্না লাল দেব, জানিয়েছেন। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন। মোহাম্মদ আলী হত্যার পর থেকে গ্রেফতার আতংকে গোসাইনপুর গ্রাম সহ আশপাশ এলাকার জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মিরা বাড়ীঘর ছেড়ে আত্মগোপন করেছেন। পুলিশ এলাকার জামায়াত শিবির সমর্থিতদের বাড়ীঘরে অভিযান দিয়েছে। এদিকে নিহত মোহাম্মদ আলীর জানাযার নামাজ গতকাল শনিবার বাদ আসর গোসাইনপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় সিলেট উত্তর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, সিলেট ডি.এস.পি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান, কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ উপস্থিত হয়ে মোহাম্মদ আলীর খুনিদের গ্রেফতার করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে এলাকা বাসীকে আশ্বস্থ করে নিহতের বাড়ীতে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। জানাযায় উপজেলা আওয়ামীলীগের আহব্বায়ক লুৎফুর রহমান, সদর ইউ.পির চেয়ারম্যান মামুন রশিদ, সদর ইউ.পি আওয়ামীলীগের আহব্বায়ক হুসেন আহমদ সহ এলাকার দলীয় নেতা কর্মিসহ বহু মানুষ শরিক হন। আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিরা জামায়াত শিবিরের লোকজন মোহাম্মদ আলীকে হত্যা করেছে দাবী করে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান। গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজনদের দাবী জামায়াত নেতা মাদ্রাসা শিক্ষক মাও: জামাল উদ্দিন উরফে মাখন মোল্লা তার দলীয় লোকজনদের নিয়ে সবসময় গ্রামে দলীয় আদীপত্য বিস্তার ও মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। গত শুক্রবার বাদ জুম্মা মসজিদের তারাবীর ইমাম রাখাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হলে জামাল মোল্লার লোকজন পরিকল্পিত ভাবে সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওমীলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সদ্য সৌদি আরব ফেরত মোহাম্মদ আলীকে হত্যা করেছে। অপরদিকে জামায়াত সমর্থিত গ্রামের লোকজনদের অভিযোগ এটা কোন রাজনৈতিক ঘটনা নয়। মসজিদ মুতল্লি কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ মাওঃ জামাল উদ্দিনকে জুম্মার নামাজের পর গালীগালাজ সহ মসজিদ মোতল্লি কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ কারণে মসজিদের বাহিরে মারামারীর ঘটনা ঘটে। এ সময় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে আওয়ামীলীগ সমর্থিত লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। মধ্যস্থতায় পড়ে গিয়ে মুরব্বী মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়। তবে এলাকার অধিকাংশ লোকজন জানিয়েছেন মূলত গ্রামে দলীয় আদীপত্য বিস্তার ও মসজিদে নিজেদের পছন্দের ইমাম ও মুতল্লি কমিটির কতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘ্য দিন ধরে গ্রামে আওয়ামীলীগ ও জামাত সমর্থিতদের মধ্যে উত্তেজনার জের ধরে সর্বশেষ শুক্রবারে এ ঘটনাটি ঘটেছে।