পবিত্র লাইলাতুল বরাত আজ

186

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র লাইলাতুল বরাত আজ। এ রজনীকে সৌভাগ্যের রজনী হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। আজ মঙ্গলবার গত রাতে বান্দার সামনে হাজির হচ্ছে মহিমান্বিত সেই রজনী। ইসলাম ধর্মে এই রাতকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ নৈকট্য লাভ এবং গোনাহ মাফের জন্য আজকের এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন মুসল্লিরা। বরাতের রজনী উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভাবগাম্ভীর্যে পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বাণী প্রদান করেছেন। বাণীতে তারা মুসলিম উম্মাহ সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপ্রতি মোঃ আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, পবিত্র শবে-বরাত সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনে। মুসলমানদের জন্য এক মহিমান্বিত ও বরকতময় পবিত্র রজনী। মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বারতা নিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাত প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমাদের মাঝে সমাগত। বাণীতে তিনি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, সৌভাগ্যের এই রজনী মানবজাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এই রাতে তিনি ক্ষমা প্রদর্শন এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন। রহমতের এই রাত আমাদের জন্য বয়ে আনুক শান্তি ও সমৃদ্ধি।
ইসলামি চিন্তবিদরা বলছেন, ইসলামে যে কয়টি মাসকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শাবান মাস। আর এই মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা মুসলমানদের কাছে অধিক পবিত্র এবং মহিমান্বিত। এই রাতে আল্লাহতাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তাই অনেকে এই রাত মুক্তির রাত হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। তাদের মতে, বান্দার এক বছরের হিসাব- নিকাশ আল্লাহ্র দরবারে উপস্থাপন করা হয়। আগামী এক বছরের জন্য বান্দার জন্ম, মৃত্যুসহ ভাগ্যের হিসাব-নিকাশ ফেরেশতাদের কাছে দেয়া হয়। তাই এই মাসে আল্লাহ কাছে গোনাহ মাফের জন্য তার বান্দারা ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন।
এছাড়াও তারা উল্লেখ করেছেন, বস্তুত মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে শাবান মাসের ফজিলত অনেক বেশি। সে উদ্দেশে শাবান মাসে মুমিন মুসলমানের জন্য বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। বিশেষ করে ‘শবে-বরাত’ মাসটিকে বিশেষ মহিমায় মহিমান্বিত করেছে। মহিমান্বিত এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ নৈকট্য লাভের এক মহান সুযোগ এনে দেয়। ওই রাতে মুমিন বান্দা তার জীবনের গোনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ লাভ করে। একটি বছরের দীর্ঘ পরিক্রমা অতিক্রম করে আসা মাহে রমজানে নিরবছিন্ন ইবাদতকে গতিশীল করতে এই মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখাসহ নফল ইবাদত যেমন নামাজ, জিকির, কোরান তেলাওয়াত, দানখয়রাতের কথা তারা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। ইবাদত-বন্দেগী ছাড়াও শবে-বরাতে মুসলমানদের প্রতিটি ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। অনেক এলাকায় শিরনি বিলাতেও দেখা যায়।
প্রতিবছর শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে লাইলাতুল বরাত হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহ্ যে কয়টি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন শব-ই-বরাত তার মধ্যে একটি। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্মসংযমের প্রস্তুতি হিসেবেই রাতটি মুসলমানদের কাছে এসে থাকে। শব-ই-বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহ্র দরবারে পানাহ চাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রমজানের এ প্রস্তুতি।
শাবান মাসে এবং পবিত্র লাইলাতুল বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রজব মাস আরম্ভ হলেই রাসূলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, হে আল্লাহ্! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করো এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ্তাআলা এ রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, বরকতময় এ রাতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। আল্লাহ্ তাঁর মাখলুকাতের দিকে বিশেষ নজরে তাকান। কোরানমজিদে আল্লাহ্ এ রাত সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন, এ রাতে আমার আদেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি স্থিরীকৃত হয়( সূরা দুখান আয়াত ৪-৫)। মহানবী হযরত মুহম্মদ সাঃ বলেন, এ রাতে নিকটবর্তী আসমান থেকে আল্লাহ্ ঘোষণা করেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাও। আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোন জীবিকার সন্ধানী আছে কি কেউ। তাকে আমি জীবিকা দান করব। আছে কি কোন ব্যথিত, বিপদগ্রস্ত, নিষ্কৃতি লাভের প্রত্যাশী? আমি তাকে নিষ্কৃতি দান করব। হাদিস শরীফে এ রাতে ইবাদত-বন্দেগী ও দিনের বেলায় রোজা রাখার কথাও বলা হয়েছে।
এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়, ৬২৪ খ্রীস্টাব্দের এদিনে মদিনা মনওয়ারার উপকণ্ঠে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাঃ সালাতরত অবস্থায় জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মুখ ফিরিয়ে মক্কার বায়তুল্লার দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের ওহী লাভ করেন। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সালাত আদায়ের এ প্রথা কার্যকর রয়েছে। এছাড়া ওই বছরের এদিনেই মাহে রমজানের সিয়াম পালনের বিধান জারি করা হয়।
পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিন রাতে সারাদেশের মসজিদে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, জিকির আজকার, ধর্মীয় আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে র‌্যাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগীর আয়োজন করা হয়েছে।