কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বাজেট নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। সারাবিশ্ব আজ অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। যেখানেই যাচ্ছি সেই কদরটা পাচ্ছি।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি বাজেট বাস্তবায়নই করতে না পারি তাহলে ২০০৮ সালের ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট থেকে এখন কীভাবে ৫ লাখ কোটি টাকার উপরে বাজেট দিলাম? এই টাকা এলো কোথা থেকে? এর উন্নয়নটা তো সারাদেশের মানুষ পাচ্ছে। কাজেই অযথা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভাল।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপিসহ বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, অনেকে বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই। ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেন? অবশ্যই টাকা আছে। তবে লুটে খাওয়ার টাকা নেই। আর ব্যাংক থেকে যারা লুট করে নিয়ে গেছেন তাদের আমরা চিনি। অনেকেই তো প্রচুর টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে আর ফেরত দেননি। দুর্নীতির দায়ে মামলায় কারাগারে বন্দীসহ এ রকম বহু ঘটনা আছে। সময় এলেই এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারব।
তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণে উচ্চাবিলাষী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। উচ্চাভিলাষ না থাকলে সমৃদ্ধি আগামীর পথে নিয়ে যেতে সহায়তা করে অগ্রযাত্রা অসম্ভবকে সম্ভব করা, অজেয়কে জয় করা, দুর্ভেদ্যকে ভেদ করারই গল্প। কোন মানুষের উচ্চাভিলাষ না থাকলে সেই অর্জন করতে পারে না। এসব অর্জন করা কখনই সম্ভব হতো না।
বিদায় নিতে যাওয়া অর্থবছর ২০১৮-১৯ সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণত অর্থমন্ত্রী সমাপনী বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। এবার বাজেট উত্থাপনের মতো ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে সংসদের ইতিহাসে। অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে সোমবার সম্পূরক বাজেট পাসের আগে সম্পূরক বাজেটের সমাপনী বক্তৃতাও করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান স্পীকার। শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়, যা সংসদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যেটি আগে কখনই ঘটেনি।
শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী অসুস্থ। তাই সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য স্পীকারকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ বলছেন বাজেট দিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারে না। বাজেট বাস্তবায়নের একটা বিষয় আছে। আমরা আজ বাজেট উপস্থাপন করছি, বাজেট পাস হবে ৩০ জুনে। আমরা এক বছর পর আবার বাজেট দেব। এই এক বছরের যে সমস্ত বাজেট বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করি। আমরা কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের সময় মাঝামাঝি সময়ে এগুলোর একটা হিসাব নেই।
তিনি বলেন, কোথাণ্ড কোন্ খাতে কি বরাদ্দ দিয়েছিলাম, কতটা কার্যকর হলো, কতটা হলো না বা কোন্ কোন্ জায়গায় বরাদ্দকৃত টাকা যথাযথ বাস্তবাœ করা সম্ভব, আর কোথায় কোথায় সম্ভব নয়। কোথায় বাস্তবায়নের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। এর পর এটা ঢেলে সাজাই। বাজেটে সেই ক্ষেত্রে পরিমার্জন করি, সংশোধন করি, এটাই নিয়ম। যাতে অর্থটা যথাযথভাবে কাজে লাগে। তিনি বলেন, বাজেটে প্রয়োজন আছে কোন্টায় প্রয়োজন নেই, সব প্রকল্প তো একইভাবে চলে না, চলতে পারে না, চলা সম্ভবও নয়। এটাই বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, বাজেট দিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারি না, এ অভিযোগ যারা করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ২০০৮ সালে ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতাম, আজ সেখানে ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেটের ওপর চলে গেছে। এত বড় বাজেট কীভাবে দিলাম, যদি বাস্তবায়নের দক্ষতাই না থাকবে? তিনি বলেন, সেই উন্নয়নের সুযোগটা সবাই নিচ্ছেন।
বিদ্যুত নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। যে বিদ্যুতের এত উন্নয়ন হলো, তাহলে শতভাগ হয় না কেন? জবাবে তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিদ্যুত প্রকল্পগুলো সব সময় চালু থাকে না। প্রত্যেকটা বিদ্যুত কেন্দ্র মাঝে মাঝে নতুনভাবে সংস্কার করতে হয়, যে কারণে বন্ধ থাকে। যেখানে যতটুক চাহিদা সেই চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুত দেয়া হয়। আজকে দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে যাচ্ছে।
সম্পূরক বাজেট প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, সম্পূরক বাজেট পেশ করেছি। বেশ কিছু প্রশ্ন এসেছে। প্রতি বাজেটেই সরকারের উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে চাহিদা ও আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের প্রাক্কলন করে থাকি। তবে বিগত বছরসমূহে বাজেট বাস্তবায়ন পরিসংখ্যান এ কথাই প্রমাণ করে, আমাদের লক্ষ্যসমূহ সব সময়ই বাস্তবভিত্তিক ছিল। যার কারণে অতীতে আমরা যখন বাজেট আলোচনা করব তখন সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতার কারণেই বাজেটে কিছুটা সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়। প্রতিবছরই এটা করে থাকি। এটা শুধু আমাদের দেশে নয় সব দেশেই হয়ে থাকে। এই বছর যে প্রস্তাবনাটা নিয়ে এসেছি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য, সেখানে আমরা ধারণা করি কত রাজস্ব আদায় করব। আমাদের উন্নয়ন বাজেট ঠিক করি কোন্ লক্ষ্যে পৌঁছাব সেটা সুনির্দিষ্ট করি। আমরা চলতি ২০১৮-১৯ সম্পূরক বাজেটের কথা বলছি। ২০১৮ সালে যখন বাজেট পেশ করি তখনই লক্ষ্যস্থির করেছিলাম সংশোধন-পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়েছে সেটি এই সম্পূরক বাজেট।
সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যেসব সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনুমানসমূহের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছিল, পরবর্তীতে বৈশ্বিক নানা ঘটনার কারণে সেসব সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেট প্রণয়নকালে সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ অনুমান করেছিলাম। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হবে বলে অনুমান করছি।
তিনি বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছিল ৭.৬ শতাংশ। যা সাফল্যজনকভাবে অতিক্রম করতে সক্ষম হব বলে আশা করছি। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ অনুমান করা হলেও সংশোধিত মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। প্রাক্কলিত জিডিপি ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ কোটি টাকার পরিবর্তে কিছুটা হ্রাস করে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ১২.৭ শতাংশ, যা অনুমান করা হয়েছিল ১৩.৪ শতাংশ। এটা খুব স্বাভাবিক নিয়মেই হয়ে থাকে। মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে বলব, আমাদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেলে সাধারণত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবার কথা। কিন্তু যেহেতু আমরা বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অত্যন্ত সতর্ক তাই সব সময় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আমরা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছি বলেই আজকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। আমরা যদি কাজই না করতাম তবে দারিদ্র্যতার হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নেমে আসত না। ২১ ভাগ থেকে আমরা আরও নামাব। ইনশাআল্লাহ! আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ!