১৭১ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর চীন থেকে দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা ॥ দায়িত্ব নিতে চায় না পররাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়

17

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন করোনা ভাইরাস আতঙ্কে চীনের উহান থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেছেন ১৩২ জন শিক্ষার্থী। এরপর তাদের রাখা হয়েছে আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে। সেখানে শুরুতে পরিবেশ, থাকা-খাওয়া নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এখন তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে দেশে ফেরার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করেছেন আরও ১৭১ জন। তবে তাদের কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, সেই বিষয়টির সুরাহা হয়নি এখনও।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের এক বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল হক জানিয়েছিলেন, ‘চীনের উহান থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ বিমানের যে ফ্লাইটটি পাঠানো হয়েছিল, তার পাইলট ও ক্রুদের অন্য দেশ ভিসা দিচ্ছে না। এ কারণে চীন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে নিজস্ব আর কোনও বিমান পাঠানো হবে না।’
আনোয়ারুল হক জানান, চীনের উহানে এখনও ১৭১ জন শিক্ষার্থী আছেন। তাদের দেশে আনা হবে। কিন্তু তাদের আনতে দেশ থেকে বিমান পাঠানো যাবে না। কারণ, যে বিমান পাঠানো হয়েছিল, তার পাইলট ও ক্রুদের সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশ ভিসা দিতে রাজি হচ্ছে না। এ কারণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চার্টার্ড বিমান নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘চীন থেকে বাংলাদেশিদের আনার জন্য এখনও ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘চীনে এখনও যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাদের মধ্যে ১৭০ জন দেশে ফেরার আবেদন করেছেন। কিন্তু সরকার এখনও তাদের জন্য অনিয়মিত (চার্টার্ড) প্লেনের ব্যবস্থা করেনি। কারণ, উহানে বাংলাদেশি বিমান খুব বেশি নেই। ওখানে গেলে পাইলটদের কোয়ারেইন্টান করা হয়। এই মুহূর্তে চীন থেকে ফ্লাইট ব্যবস্থা করে যদি তারা আসেন, তাহলে দূতাবাস সহযোগিতা দেবে।’
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে ১৩২ জনকে আনার জন্য বাংলাদেশ বিমানের যে ফ্লাইটটি গিয়েছিল, সেটির চিকিৎসক ও বিমানকর্মীদের কোয়ারেইন্টাইন করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্রোরা। তিনি বলেন, ‘চীন থেকে যে বিমানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হয়েছে, সে বিমানের চিকিৎসক ও বিমানকর্মীরা হোম কোয়ারেইন্টানে আছেন। তাদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি আমরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘১৭১ জনকে ফিরিয়ে আনার জন্য চীন সরকার এখনও অনুমতি দেয়নি। আর ভাড়া নেওয়ার জন্য বিমান পাওয়া যাচ্ছে না। চেষ্টা চলছে বিমান ম্যানেজ করার জন্য, আবার ক্রুও পাওয়া যাচ্ছে না। আর চীন থেকে তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, সে বিষয়টি আসলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।’
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘চীনে থাকা ১৭১ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমার মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা নয় বা আমরা এটা নিয়ে ভাবছিও না। যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হবে।’
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান বলেন, ‘সবাই জানতে চায় বাকিদের প্রসেসটা কবে হবে। কিন্তু এটা আমি বলতে পারবো না। তারা আসলে দেশে যেতে চায়। কিন্তু অ্যাম্বাসি তো নিজে থেকে কিছু করতে পারে না।’
বাংলাদেশিদের চীন থেকে ফেরত আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রথম ৩১২ জনকে নিয়ে এসেছি। আমরা যাদের এনেছি, তাদের কেউ এখনও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। চীনে থাকা আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, চীনে যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাদের কেউ আক্রান্ত হননি। যারা আছেন তাদের সম্পর্কে আমরা ২৪ ঘণ্টা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
চীনে থাকা ১৭১ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই ১৭১ জন উহানে থাকেন না। তারা হুবেই প্রদেশের ২৩টি জায়গায় রয়েছেন।’ যখনই সুযোগ-সুবিধা হবে, তখনই তাদের আনা হবে বলেও তিনি জানান।