বাংলাদেশের বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো নয়। অনেক সড়ক রীতিমতো খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় সেগুলোতে পানি জমে থাকে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা সেসব খানাখন্দে মাছ চাষ, ধান চাষের প্রতিবাদী কর্মসূচির আয়োজন করে। কখনো কখনো সেসব সড়ক মেরামত করতেও দেখা যায়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই দেখা যায় সড়কগুলো আগের অবস্থায়ই চলে এসেছে। আবারও খানাখন্দে ভরে গেছে। সড়কের এমন বেহালের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা, বাড়ছে প্রাণহানিও। যানবাহনের ক্ষতি তো আছেই। এ অবস্থার কি কোনো প্রতিকার নেই?
আধুনিক যুগে উন্নয়নের একটি প্রধান শর্ত হয়ে উঠেছে সড়ক অবকাঠামো। যে দেশে সড়ক অবকাঠামো যত শক্তিশালী, পণ্য বা মানুষ যত সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করতে পারে, সে দেশে উন্নয়ন তত বেশি গতি পায়। কয়েক বছর ধরে চার লেন, আট লেন করাসহ বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি মহাসড়কের উন্নয়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে সড়ক নেটওয়ার্ক রক্ষায় ততটা মনোযোগ দেখা যায় না। তার প্রতিফলন দেখা যায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বরাদ্দের বৈষম্যে। আবার বরাদ্দ হলেও নির্মাণকাজের তদারকি যথাযথ না হওয়ায় কাজ মানসম্মত হয় না। ফলে মেরামত বা নির্মাণ করা সড়কগুলো স্থায়ী হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণকাজ শেষ হতে না হতেই সড়কগুলোতে ভাঙন ধরে। বিশেষজ্ঞরা সড়কের এ দুরবস্থার জন্য যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে আছে অর্থ বরাদ্দে বৈষম্য, দেরিতে কাজ শুরু করা, রাজনৈতিক চাপে অযোগ্য ঠিকাদার নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অতিরিক্ত ওজনের বা অতি ভারী যানবাহন চলাচল, ঠিকাদার-প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের লাগামহীন দুর্নীতি এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির অভাব। সিলেট-সুনামগঞ্জের কুমারগাঁও থেকে লামাকাজী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। কাজ শেষ করার কিছুদিনের মধ্যেই সড়কটিতে ভাঙন ধরে। এ নিয়ে প্রকৌশলী, ঠিকাদারসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ল্যাবরেটরি টেস্টেও দেখা যায়, শর্ত মোতাবেক নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি সংস্কারকাজে। আবার কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ‘সম্পন্ন’ দেখিয়ে বিল অনুমোদন করেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এভাবে পরস্পরের যোগসাজশে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমন ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। সরকারের অর্থ যাচ্ছে, অথচ সড়ক চলাচলের অযোগ্যই থেকে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট এবং জনদুর্ভোগ।
বর্তমান সরকার দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের সামগ্রিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি এভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে জনগণ এসব মেগা প্রজেক্টের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। তাই বিদ্যমান সড়ক অবকাঠামোর চলাচলযোগ্যতা অটুট রাখার ওপর আরো জোর দিতে হবে। অসাধু কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। জনগণের অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।