জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন অকল্পনীয়ভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় দেশের এমন উন্নতি ও অগ্রগতির কথা কেউ কল্পনা না করলেও আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন মাধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল শব্দটি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করলেও আজ দেশ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। এ সময়ে আমাদের প্রয়োজন এমন একটি নতুন প্রজন্ম যারা মেধা ও মননে দেশকে উন্নতি এবং অগ্রগতির শীর্ষে নিয়ে যাবে। তাই জাতি গভীর আগ্রহে নবীন ও তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন নতুনত্ব ও অগ্রগতির কারণে বর্তমান বিশ্ব দিন দিন আরো চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে। সেই সঙ্গে পারস্পরিক একনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর নিভর্রশীল হচ্ছে। বিশ্বের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আজকে ছাত্র-ছাত্রীদের উপযুক্ত লক্ষ্য এবং নীতিনির্ধারণ করা প্রয়োজন।
জকিগঞ্জের ভূয়সি প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন এখানে এসে রাজনৈতিক সোর্হাদ্যপূর্ণ সম্প্রীতির বন্ধন দেশে আমি মুগ্ধ। দল মতের উর্ধ্বে থেকে আজকের অনুষ্ঠানে সকল শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি দেখে আমি বিশ্বাস করি জকিগঞ্জ আরও এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা হচ্ছে উন্নয়নের সিঁড়ি। এই শিক্ষা বিস্তারে একজন হাফিজ আহমদ মজুমদারের ভূমিকা অনন্য। একজন ব্যক্তি-ই যে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেন তার দৃষ্টান্ত হাফিজ মজুমদার। নদী ও পরিবেশ রক্ষায় প্রাণান্তকর প্রয়াসের প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন মন্ত্রী।
তিনি বুধবার দুপুরে জকিগঞ্জ উপজেলার সাজ্জাদ মজুমদার বিদ্যানিকেতন মাঠে হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্টের ৩৪তম বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। হাফিজ মজুমদার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাফিজ মজুমদার ট্রাস্টের সচিব আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী।
‘আমার মাথা নত করে/ দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে/ সকল অহংকার হে আমার/ ডুবাও চোখের জলে’ বিশ্ব কবির রবিন্দ্রনাথের কবিতার লাইন উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আপনাদের সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিন। তাদের পাশে দাঁড়ান। আসুন সবাই মিলে শিক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমি শিক্ষার উন্নয়নে আমৃত্যু কাজ করে যাবো।
হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্টের সহকারি সচিব প্রিন্সিপাল শুভ্রকান্তি দাস চন্দনের পরিচালনায় শুরুতে ট্রাস্টের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ট্রাস্টি মোঃ খায়রুল আলম।
প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্টের একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. কবির এইচ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্কলার্স হোমের প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী, পূবালী ব্যাংকের মহা ব্যবস্থাপক বিএম শহীদুল হক, জাফলং ভ্যালী স্কুলের প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আজিজুস সামাদ, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাব্বীর আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজন কুমার সিংহ, হাফসা মজুমদার মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল নিয়াজুর রহমান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস ছালাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ কুতুব উদ্দিন ও গণিপুর কামালগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ আজির উদ্দিন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্কলার্স হোম শাহী ঈদগাহ শাখার ছাত্র রাইয়ান চৌধুরী, বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র আরাফাত আর রাফী ও ছাত্রী খাদিজা আক্তার।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর নাজিম আহমদ মজুমদার, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবেদ হাসান, সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেল) মোস্তাক সরকার, সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাহিদুল করীম, জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার, খলাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমদ, কসকনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ, জকিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, প্রবীণ মুরব্বী আব্দুল মালিক তাপাদার কালন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার, সিলেট জেলা জাপার যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এম.এ.জি.বাবর, জাপা নেতা নুমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুছলেহ উদ্দিন সুহেল, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল আহাদ, পৌরসভা যুবলীগের আহবায়ক শাহাব উদ্দিন তাপাদার শাকিল, হাসান আহমদ মজুমদার, শিক্ষক নেতা মহিউদ্দিন হায়দার, শুয়াইবুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা উদ্দিন ও যুব সংহতি নেতা তাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান শেষে জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলার প্রাথমিক স্তরের বৃত্তিপ্রাপ্ত ৩৩৫ জন ও মাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিপ্রাপ্ত ৩০৪জন শিক্ষার্থীর হাতে সনদ ও নগদ অর্থ তুলেন অতিথিবৃন্দ।
এদিকে প্রধান অতিথি জাতীয় পার্টির অন্যতম নীতিনির্ধারক পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তাঁর দীর্ঘ ৩৩ মিনিটের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বর্তমান সরকারের প্রশংসায় মুগ্ধ থাকলেও জাতীয় পার্টি ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নাম একটি বারের জন্যও নেননি। এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠান শেষে জাপা নেতা নুমান উদ্দিন চৌধুরী ও যুব সংহতি নেতা তাজুল ইসলাম পার্টির নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে জানতে মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।