স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে বাংলাদেশ। এ যোগ্যতা অর্জনের জন্য স্বীকৃতিপত্র দিয়েছে জাতিসংঘ। আর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণা করেছে। এ সবই সুখবর, কিন্তু উদ্বেগজনক খবরও রয়েছে। দেশের সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ এখনো শ্রমশক্তির বাইরে রয়ে গেছে। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী এই লোকগুলো কর্মক্ষম হলেও স্বীকৃত শ্রমপ্রক্রিয়ায় তারা সংশ্লিষ্ট নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রমশক্তির বাইরে থাকা সাড়ে চার কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে তিন কোটিই নারী। ঘরের কাজ নিয়েই তারা ব্যস্ত। আর এক কোটি ২০ লাখ তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। তারা পড়াশোনার প্রক্রিয়ার মধ্যেও নেই, তাদের প্রশিক্ষণও নেই, কর্মক্ষেত্রেও নিয়োজিত নয়। দেশে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। ছয় কোটি আট লাখ মানুষ কর্মে নিয়োজিত, বাকিরা শ্রমশক্তির বাইরে।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত এক লাখ ২৩ হাজার খানার ওপর জরিপটি চালানো হয়। মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ছদ্মবেকারের সংখ্যা ৬৬ লাখ। তাদের মধ্যে চাকরি খুঁজেও পায়নি এমন লোকের সংখ্যা ২৭ লাখ, ১৪ লাখ লোক খণ্ডকালীন কাজ করছে। আর ২৪ লাখ লোক চাকরি খোঁজেনি, কিন্তু চাকরির জন্য উপযুক্ত এবং পেলে করত। কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও খুব সন্তোষজনক নয়। এক বছরে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। শিল্প খাতে বাড়লেও তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় হয়নি। সেবা খাতে বড় আকারে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৬ সালে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ছিল দুই কোটি ৫৪ লাখ, এক বছরে কমেছে সাত লাখ। শিল্প খাতে কর্মরত রয়েছে এক কোটি ২৪ লাখ লোক, জরিপের আগে ছিল এক কোটি ২২ লাখ। সেবা খাতে ২০১৬ সালে দুই কোটি ২০ লাখ লোক নিয়োজিত ছিল। এক বছরে আরো ১৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সার্বিকভাবে শ্রমবাজারে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি বেড়েছে।
বিপুলসংখ্যক লোকের শ্রমশক্তির বাইরে থাকার বড় কারণ গৃহকর্মে নিযুক্ত থাকা। সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা পেলে তাদের বেশির ভাগ শ্রমশক্তিতে শামিল হতো। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশকে উন্নত ধাপে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। তাই কর্মসংস্থানের আনুষ্ঠানিক খাতগুলোতে তাদের সংশ্লিষ্ট করতে হবে। বেশি নজর দিতে হবে শিল্প খাতে। প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বা প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়াতে হলে এ খাতে নজর দিয়েই শ্রমশক্তি বাড়াতে হবে। বাদ পড়ে থাকা ব্যক্তিদের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ দ্রুত নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের পরিচয় ধরে রাখার প্রয়োজনেই তা করতে হবে।