বিকল্প বাজার তৈরি জরুরী

41

বাংলাদেশের বাজার অনেকটাই আমদানিনির্ভর বলে আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে এখানে তার প্রভাব পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো জিনিসের দাম কমে গেলে এখানকার বাজারেও তার প্রভাব পড়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, দাম কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। বরং যত দিন পারা যায়, বর্ধিত দামে পণ্য বেচাকেনাতেই তাদের আগ্রহ। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত সব সময়ই দেওয়া হয়। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ তৈরি হয়েছে তেলের দামের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। তেল আমদানির জন্য বর্ধিত দামে ডিও খুলতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেলের দাম লিটারে দুই টাকা বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু বেশি দামে আমদানি করা তেল দেশে এসে পৌঁছানোর আগেই যদি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, সেটা কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না। অথচ ট্যারিফ কমিশনে দাম বাড়ানোর আবেদন করেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাইরের বাজার থেকে নতুন দামে কেনা তেল দেশে আসার পর ট্যারিফ কমিশন দাম নির্ধারণ করে দিলে সেই দামেই তা বিক্রি হবে। এটাই নিয়ম হওয়া উচিত। কিন্তু দেশের বাজারে ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্তই যেন শেষ কথা হয়ে উঠেছে। ভোক্তাদের জিম্মি করে এভাবে দিনের পর দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বাজার নিয়ে স্বস্তিতে নেই ভোক্তারা। চালের বাজার আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। মাঝারি মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায়। একেবারে কম দামের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা দরে। অথচ এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। উৎপাদন ভালো হয়েছে। সরবরাহ প্রচুর। তার পরও পরিবহন সমস্যার অজুহাত তুলে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চালের দাম। আসলে ভোক্তাদের অসহায়ত্বকেই যেন পুঁজি করেছে ব্যবসায়ীরা। দেখারও যেন কেউ নেই। বাজারে কোনো নজরদারি নেই। বিকল্প বাজার তৈরির চেষ্টা তো হলোই না। ফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ে তাদের চিন্তিত থাকতেই হচ্ছে। নির্বাচনের বছরে হয়তো এভাবেই ক্রেতাদের জিম্মি করে অনৈতিকভাবে লাভবান হবে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এতে সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামবে।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবন যাপন সহজ করতে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।