স্পোর্টস ডেস্ক :
অনেক দিন পর এক যোগে জ্বলে উঠলো গোটা দল। কিন্তু এমন অভূতপূর্ব প্রেরণা কোথা থেকে এলো হঠাৎ করে? প্রতিপক্ষ হাথুরু বলেই কী এভাবে গর্জে ওঠা? এ যে মোক্ষম জবাব!
হাথুরুর শ্রীলঙ্কাকে স্রেফ পাড়া মহল্লার দল বানিয়ে ছাড়লো টাইগাররা। ১৬৩ রানের অবিশ্বাস্য জয়ে নতুন রেকর্ড করে ছাড়লো মাশরাফিরা। হাথুরুর দর্পচূর্ণ। শ্রীলঙ্কাকে মাটিতে নামিয়ে আনলেন হাথুরুর সাবেক শিষ্যরা। হাথুরু ছাড়া যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বেশ ভালোভাবেই চলবে, সেটাই বুঝিয়ে দিল টাইগাররা।
তখন খেলা শেষ পর্যায়ে। ড্রেসিং রুমে বিমর্ষ মুখে শিষ্যদের অসহায়ত্ব দেখছিলেন হাথুরু। এমন সময় ক্যামেরা ধরা হলো তাঁর মুখের উপর। দর্শকরা বিদ্রুপ করে চেচিয়ে উঠলেন। আর কিছু নয়, ওটা ছিল দর্শকদের পক্ষ থেকে হাথুরুকে তিরস্কার। দর্শকরা জবাব দিয়েছেন গ্যালারিতে বসে।
আর ২২ গজে ব্যাট বলে লঙ্কানদের ধসিয়ে দিয়ে সাবেক গুরুকে মোক্ষম জবাব দিয়েছেন টাইগাররা। ৩২০ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করানোর পর বোলররা বিধ্বস্ত করেছেন লঙ্কান ব্যাটিং লাইন। শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় মাত্র ১৫৭ রানে, ৩২.২ ওভারে। ১৬৩ রানের জয়! বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টা আসলো হাথুরুর দলের বিপক্ষেই। এর চেয়ে বড় জবাব আর কী হতে পারে!
তাঁর সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল ২০১৯ পর্যন্ত। বিশ্বকাপে তিনি দলকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন- বিসিবি তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল। বিসিবির সৌজন্যতায় হয়েছিলেন বিশ্বের চতুর্থ দামি কোচ। কিন্তু নিজ দেশের প্রস্তাব পাওয়ার পর চোখ পাল্টিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশের প্রতি কমিটমেন্ট মুহূর্তে ভুলে যান। চুক্তি লঙ্গন করে দুই বছর আগেই পদত্যাগ করে বসেন।
পদত্যাগের পরও তাকে বারবার অনুরোধ করেছিল বিসিবি। কিন্তু বিসিবির সেই অনুরোধ কানে তুলেননি। নিজ দেশের কোচ হয়ে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে সেই বাংলাদেশেই আসেন হাথুরু। সাবেক গুরুর বিপক্ষে শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে (বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ) মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। হাথুরুর দাম্ভিকতার উপযুক্ত জবাব দিয়েই মাঠে ছাড়েন তামিম সাকিব মাশরাফিরা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ৩২০ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করে বাংলাদেশ।
গত ম্যাচে অপরাজিত ৮৪ রান করে ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক তামিম ইকবাল আজ যেন ওখান থেকেই শুরু করেছিলেন। ভয়ডরহীন ব্যাটিং যাকে বলে। পার্টনার এনামুল হক শুরুতেই জীবন পেলেন। আড়াই বছর পর জাতীয় দলে ফেরা এ ওপেনার তেমন রান করতে পারেননি গত ম্যাচে। আজ টেনেটুনে করেছেন ৩৭ বলে ৩৫ রান। ওপেনিংয়ে স্থায়ী হতে হলে যে আরও ভালো কিছু করতে হবে তাকে।
বরাবরই তামিম নির্ভর দল বাংলাদেশ। শুরুটা তিনি ভালো করে দিতে পারলে তার উপর ভর করে ভালো স্কোর দাঁড়িয়ে যায়। বেশ অনেক দিন ধরেই টানা রানের মধ্যে আছেন তামিম। গত ম্যাচে সময়ের অভাবে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এ ম্যাচে কী সেঞ্চুরিটা করে ফেলবেন? এই হিসাব নিকাশের মধ্যেই হুট করে আউট হয়ে যান ১০২ বলে ৮৪ রান করে।
তখন ১৭০ রান ২৯.১ ওভারে। আটটি উইকেট হাতে। মানে দল অসাধারণ জায়গায়। সাকিব রান করে যাচ্ছেন অবলীলায়। বল হাতে স্পিন বিভাগের মূল দায়িত্বটা তাঁর কাঁধে। বোলিংয়ে এত বড় দায়িত্ব পালন করার পরও ব্যাটিংয়ে তিন নম্বরে নামা মুখের কথাও নয়। কিন্তু সাকিবের তিন নম্বর পজিশনটাই সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু এই পজিশনে স্থায়ী হওয়াটাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ তার জন্য। আজকে সহ ক্যারিয়ারে সাকুল্যে চারবার তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছেন সাকিব। কিন্তু আগের তিন ইনিংসে সর্বোচ্চ ছিল ৩৭, যা গত ম্যাচেই করেছিলেন তিনি।
ওই ম্যাচের পর জানিয়েছিলেন, তিন নম্বরে তিনি বড় ইনিংস খেলতে চান। আজ শুরু থেকে যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে মনে হয়েছিল এ ম্যাচে বড় ইনিংস খেলে ফেলবেন। কিন্তু দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করার মধ্যেই সহজ একটা বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান ৭৩ বলে ৬৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলার পর। অধিনায়কত্ব নিয়ে ঝামেলার পর সেই ক্লাসিক মুশফিককে দেখা গেল এ ম্যাচে। তামিম হাফ সেঞ্চুরি করেন ৭২ বলে, সাকিব ঠিক ৫০ বলে, আর মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি হাঁকালেন ৪২ বলে। এদিকে ২৩ বলে ২৪ রান করে আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
রিযাদ ফিরে যাবার কিছু পরেই ৫২ বলে ৬২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে বিদায় নেন মুশফিক। শেষ দিকে সাব্বিরের ব্যাটিং ঝলকে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৩২০। ১২ বলে ২৪ করেন সাব্বির। শ্রীলঙ্কার হয়ে পেরেরা তিন উইকেট নেন।
৩২০ রানের বিরাট স্কোর তাড়া করতে গিয়ে টাইগারদের দারুণ বোলিংয়ে শুরু থেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। পড়তে থাকে একের পর এক উইকেট। মাশরাফি থেকে সাকিব- সবাই যেন তেঁতে ছিলেন। ফিফটি তো দুরের কথা, কোনো ব্যাটসম্যানই ৩০ এর কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। ৩২.২ ওভারে মাত্র ১৫৭ রানে অল আউট। লজ্জার হার।
সাকিব নেন তিন উইকেট। গত ম্যাচেও তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি ও রুবেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ১৬৩ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইনিংস: ৩২০/৭ (৫০ ওভার)
(তামিম ইকবাল ৮৪, এনামুল হক বিজয় ৩৫, সাকিব আল হাসান ৬৭, মুশফিকুর রহিম ৬২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৪, সাব্বির রহমান ২৪*, মাশরাফি বিন মুর্তজা ৬, নাসির হোসেন ০, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৬*; থিসারা পেরেরা ৩/৬০, নুয়ান প্রদ্বীপ ২/৬৬, আকিলা ধনঞ্জয়া ১/৪০, আসেলা গুনারতেœ ১/৩৮, ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা ০/৫১, সুরঙ্গা লাকমল ০/৬০)।
শ্রীলঙ্কা ইনিংস: ১৫৭ (৩২.২ ওভার)
(কুসল পেরেরা ১, উপুল থারাঙ্গা ২৫, কুসল মেন্ডিস ১৯, নিরোশান ডিকওয়েলা ১৬, দিনেশ চান্দিমাল ২৮, আসেলা গুনারতেœ ১৬, থিসারা পেরেরা ২৯, ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা ০, আকিলা ধনঞ্জয়া ১৪, সুরঙ্গা লাকমল ১, নুয়ান প্রদ্বীপ ০*; সাকিব আল হাসান ৩/৪৭, মাশরাফি বিন মুর্তজা ২/৩০, রুবেল হোসেন ২/২০, নাসির হোসেন ১/২০, মোস্তাফিজুর রহমান ১/২০)।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।