কোনো একটা ছুতো পেলেই হয়, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। হরতাল, বৃষ্টি, বন্যা, যানজট ছুতোরও অভাব হয় না। কখনো কখনো আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতও শোনা যায়। সর্বশেষ যে ছুতোয় তারা দাম বাড়িয়েছে সেটি হলো কুয়াশা। কুয়াশার কারণে পণ্য নিয়ে ট্রাক আসতে সময় বেশি লাগছে, তাই ট্রাকের ভাড়া বেড়ে গেছে। সে কারণেই নাকি তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ট্রাকভাড়া কত টাকা বেশি হওয়ায় কেজিপ্রতি তারা কত টাকা দাম বাড়িয়েছে, তা হিসাব করলে দেখা যায় তারা কতটা ন্যায়সংগত আচরণ করছে। বাজারে কুয়াশার অজুহাতে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শাকসবজি ও তরিতরকারির। আর এটি করছে খুচরা বিক্রেতারাই বেশি।
সভ্য দুনিয়ায় খুচরা পর্যায়ের বাজারেও কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। দুর্ভাগ্য, আমাদের তা নেই। বাজার যখন চরমভাবে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, ক্রেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে, তখন আমাদের নীতিনির্ধারকদের নানা রকম অন্তঃসারশূন্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আশ্বাস দিতে দেখা যায়। তাতে বাজারের কোনো বিশেষ পরিবর্তন হয় না। গত বন্যার পর চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে এ রকম অনেক আশ্বাসই দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে চালের দাম খুব একটা কমেনি। কিছুদিন আগে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কয়েক গুণ বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মৌসুম শুরু হওয়ায় এখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও আগের অবস্থায় আসেনি। ২০-২৫ টাকা দামের পেঁয়াজ এখনো ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মনিটরিংয়ের অভাব বা বাজারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ কাজ না করার কারণেই ব্যবসায়ীরা এ ধরনের আচরণ করতে পারছে। যখন কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়, তখনই তা নির্ধারণ করা গেলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া গেলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে যেমন খুশি আচরণ করা সম্ভব হতো না।
বাজার স্থিতিশীল রাখা, ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটি কোন পদ্ধতিতে করা হবে, তা রাষ্ট্রকেই নির্ধারণ করতে হবে। আগে টিসিবির মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপের কিছু প্রচেষ্টা থাকলেও এখন তা নেই বললেই চলে। আমরা আশা করি, পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।