এলাকা জুড়ে আনন্দের বন্যা ॥ কানাইঘাটে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা নদীর মমতাজগঞ্জ বাজারে আরো একটি সেতু নির্মিত হচ্ছে

29

নিজাম উদ্দিন কানাইঘাট থেকে :
কানাইঘাট উপজেলা সদরে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পর এবার কানাইঘাটে সীমান্তবর্তী দর্পনগর-মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে সুরমা নদীর উপর ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একটি সেতু নির্মাণ হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার লাখো মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। সিলেট-৫ কানাইঘাট জকিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ¦ সেলিম উদ্দিন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার কানাইঘাট মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুর জন্য ৯০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দের (স্কিম) অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এলজিইডি’র উদ্যোগে উক্ত সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুর যাবতীয় নকশা তৈরি সম্পন্ন হওয়ার পর টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। সেতু নির্মাণের জন্য ৯০ কোটি টাকা ছাড়ের সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সীমান্তবর্তী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম আনন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে কানাইঘাটের কৃতি সন্তান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কানাইঘাট উপজেলা সদরের পাশে সুরমা নদীর উপর জিয়াউর রহমান সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় হারিছ চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছিলে দর্পনগর-মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে এবং জকিগঞ্জের আটগ্রাম বাজার ও কানাইঘাটের কাড়াবাল্লা নামক সুরমা নদীর উপরে আরো দু’টি সেতু নির্মাণ করা হবে। সে সময় এলজিইডি’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে সেতুর নকশা তৈরি করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিমের আওতাভুক্ত করা হয় এ দু’টি প্রস্তাবিত সেতুর। পরবর্তীতে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কানাইঘাট উপজেলা সদরে নির্মাণাধীন জিয়াউর রহমান সেতুর নাম পরিবর্তন করে উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরীর নামে সেতুর নাম করণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুশাহিদ সেতুর শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু দর্পনগর-মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ এতদিন থমকে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী মমতাজগঞ্জ ও কাড়াবাল্লা এলাকায় লাখো মানুষ প্রস্তাবিত স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিলেন। সেই এলাকার সন্তান কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি সাংবাদিক আব্দুর রব বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য এলাকায় মানববন্ধন ও সভা সমাবেশ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রণালয়ে সেতু নির্মাণের জন্য আবেদন দিয়েছিলেন। বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মমতাজগঞ্জ বাজারে পাশে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নানা ধরনের তদবির চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি কানাইঘাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সেলিম উদ্দিন এমপি তার বক্তব্যে বলেছিলেন, মমতাজগঞ্জের সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের সু-খবর দিয়েছিলেন। যে কোন সময় সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়ে ছিলেন। গতকাল বুধবার সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৯০ কোটি টাকার স্কিমে অনুমোদন দেওয়ায় সে সু-সংবাদটি তিনি মিডিয়াকর্মীদের তাঁর একান্ত সচিব রুহুল আমিন রাজুর মাধ্যমে জানিয়েছেন। সীমান্তবর্তী মমতাজগঞ্জ বাজারে সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হলে ঐ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। সীমান্ত এলাকার নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি যোগাযোগ বিচ্ছিহ্ন ঐ এলাকায় যানবাহন চলাচল সহ পাশর্^বর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সাথে ট্রানজিটের মাধ্যমে স্বল্প খরছে যানবাহনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন। এছাড়া কাড়াবাল্লা সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি স্থলবন্দর নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কানাইঘাটের সুরমা নদীর উপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের মাধ্যমে স্থল বন্দরের প্রস্তাব আরো জোরদার এবং ব্যবসা বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। সেতু নির্মাণে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সিলেট-৫ আসনের এমপি সেলিম উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কানাইঘাটবাসী। কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী দর্পনগর-মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে সেতু নির্মাণের জন্য যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর বহু প্রত্যাশিত এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী এ সেতু নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় আমি সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।