কাজিরবাজার ডেস্ক :
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী আর নেই। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সোয়া দুটার পর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন বারী সিদ্দিকী।
বারী সিদ্দিকী দুই বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। গত বছর থেকে সপ্তাহে তিনদিন কিডনির ডায়ালাইসিস করে আসছিলেন। ডায়াবেটিস্ও ছিল তার। গত ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৮ নভেম্বর শনিবার ভোররাতে বারী সিদ্দিকীকে লাইফ সাপোর্টে নেন চিকিৎসকরা। বারী সিদ্দিকীর দু’টি কিডনিই অকার্যকর হয়ে পড়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হয় বলে তখন সাংবাদিকদের জানান চিকিৎসকরা।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ভাটি অঞ্চলের জেলা নেত্রকোণায় আবদুল বারী সিদ্দিকীর জন্ম। শৈশবে পরিবারেই তার গান শেখার হাতেখড়ি। কিশোর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন বারী। পরে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ বহু গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য পান। একটি কনসার্টে বারি সিদ্দিকীর গান শুনে তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন ওস্তাদ আমিনুর রহমান। পরে ছয় বছর ধরে চলে সেই প্রশিক্ষণ।
সত্তরের দশকে নেত্রকোণা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী। পরে ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। এক সময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন।
বহু বছর ধরে সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এই গুণী শিল্পী দেশবাসীর কাছে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পান ১৯৯৯ সালে। ওই বছর কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে ছয়টি গান করেন তিনি, যার প্রতিটিই বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’ এবং ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’।
এসবের বাইরেও তিনি কয়েকটি সিনেমায় প্লে-ব্যাক করেছেন। তার গাওয়া গান নিয়ে বের হয়েছে অডিও অ্যালবাম। নিয়মিত গান করেছেন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ও গানের আসরে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সাড়ে ১০টায় বিটিভিতে দ্বিতীয় জানাযা এবং বারী সিদ্দিকীর বিদ্যাপীঠ নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে বাদ আসর তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জেলা সদরের চল্লিশা বাজারের কার্লি গ্রামে নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হবে।