পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
নি¤œচাপের প্রভাবে শুক্র ও শনিবারের টানা বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদীসহ সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদের নতুন ২টি ও পুরাতন ৪টি ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে ও পাহাড়ি ছড়াগুলোর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে নিমজ্জিত করে ফেলেছে ব্যাপক এলাকার আমন ফসল। নিমজ্জিত করে কমলগঞ্জ-আদমপুর-কুরমা সড়ক। অন্য দিকে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুরে চাতলা সেতু সংলগ্ন এলাকায় মনু প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে দ্রুত গতিতে ঢলের পানি প্রবেশ করে একটি চা বাগান এলাকাসহ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি নিমজ্জিত করছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে হালকা আকারে বৃষ্টি শুরু হলেও শুক্র ও শনিবার দুই দিন দুই রাত অবিরাম মাঝারী বৃষ্টিপাত কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়ন থেকে রহিমপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত সবগুলো পয়েন্টে ধলাই নদের পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে। কমলগঞ্জ পৌরসভার আলেপুর গ্রামের ও আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের নতুন ভাঙ্গন এবং ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর, মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা,বাঘবাড়ি,গোবিন্দ বাড়ি ও মাঝেরগাঁও ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ গ্রাম এলাকার ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে নেমে আসা উজানের ঢলের পানি প্রবেশ করে ব্যাপক এলাকার ফসলি জমি ও গ্রাম্য রাস্তা নিমজ্জিত করে। কমলগঞ্জ-আদমপুর-কুরমা সড়কের শ্রীপুর ও তিলকপুর এলাকার প্রায় দুই কি:মি: সড়ক দেড় ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত ছিল।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্র রবিবার সকালে জানান, ধলাই নদী ও লাঘাটাসহ সবগুলো পাহাড়ি ছড়ার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে পুরাতন সবগুলো ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে দ্রুত পানি গ্রামে প্রবেশ করে গ্রাম্য রাস্তাঘাট নিমজ্জিত করছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম যথাক্রমে কালারায় বিল, শ্রীপুর, পাথারী গাঁও, কানাইদাশী ও গুলের হাওর গ্রাম, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, নারায়নপুর, ছাইয়াখালি হাওর, মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা, মাছেল গাঁও, ধলাইরপাড়, ভাষানী গাঁও ও বনগাঁও, কমলগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উত্তর ও দক্ষিণ কুশালপুর, আলেপুর ও দক্ষিণ কুমড়া কাপন, পতনউষার ইউনিয়নের কেওলার হাওর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর, শমসেরনগর ইউনিয়নের শিরাউলী, মরাজানের পর, সতিঝির গাঁও, গ্রামের ব্যাপক এলাকার আমন ফসল নিমজ্জিত করে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী উপজেলা কৃষি অফিসার পূর্ণ কুমার সিংহ বলেন, প্লাবনের পানিতে ইসলামপুর ইউনিয়নে ২০০ হেক্টর জমির রোপিত আমন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। শ্রীপুর এলাকার ধলাই নদের পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে দ্রুত ঢলের পানি প্রবেশ করছে গ্রামে। কমলগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ কুমার সিংহ টানা বৃষ্টিতে ধলাই নদীর পানিতে ফসল নিমজ্জিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রোববার সকালে তারা প্রাথমিকভাবে সারা উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমির আমন ফসল নিমজ্জিত হওয়ার তত্য জেলা অফিসে প্রেরণ করেছেন। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। সাথে সাথে ব্যাপক এলাকার শীতকালীন শাকসব্জি বিনষ্ট হওয়ার সত্যতাও তিনি নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় কমলগঞ্জের উপরাংশের গ্রামগুলোর ফসলি জমির পানি নেমে যেতে শুরু করে। তবে এখন আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলের অবস্থার আরও অবনতি হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় ঢলের পানিতে কমলগঞ্জে নদী ও পাহাড়ি ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়ে এবং ধলাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের নতুন ও পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রাম্য রাস্তা ও জমির আমন ফসল নিমজ্জিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আরও বলেন, রবিবার দুপুর থেকে ধলাই নদের পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় উপারাংশের উন্নতি হচ্ছে। তবে এখন নি¤œাঞ্চলের অবনতি হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এ পরিস্থিতির উপর সার্বিক নজরদারি করছে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মনু নদের বাঁধ ভেঙ্গে দ্রুত ঢলের পানি প্রবেশ করে পালকী ছড়া চা বাগান, ইটারঘাট, কালারায়ের চর, মনোহরপুর, দত্তগ্রামসহ অন্যান্য গ্রাম নিমজ্জিত হচ্ছে। শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: জুনাব আলী জানান, রবিবার রাত ১২টার পর মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ঢলে পানি প্রবেশ করছে গ্রামে। তিনি আরও বলেন, অবস্থা দেখে অনুমান করা যায় এ অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। তাছাড়া পানির ¯্রােতের আঘাতে মনু সেতুও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী নরেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী গত দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে ধলাই ও মনু নদের পানি বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি সবেমাত্র এখানে যোগদান করেছেন। সবকিছু গুছায়ে উঠতে পারেননি। তবে তার কার্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তারা মনু ও ধলাই নদীর সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারী করছেন।