আমির-সেক্রেটারিসহ জামায়াতের আট নেতা রিমান্ডে ॥ প্রতিবাদে কাল দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

35

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানসহ আট নেতার পৃথক দুই মামলায় পাঁচ দিন ও ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবী শুনানি শেষে আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলা দুইটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কদমতলী থানার ইন্সপেক্টর মো. সাজু মিয়া প্রত্যেক মামলায় আসামিদের ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ডকৃত অপর ছয় আসামি হলেন, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর আমির মোহাম্মদ শাজাহান, সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার আমির জাফর সাদেক, সেক্রেটারি জেনারেলের ব্যক্তিগত সহকারী নজরুল ইসলাম ও মো. সাইফুল ইসলাম।  এর আগে গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কদমতলী থানাধীন বিক্রমপুর গার্ডেন সিটির ৪৪২/২ পূর্ব ধোলাইপাড়ের বাসার সাত তলায় আসামিরা গোপন বৈঠকে মিলিত হন। খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হলে অপর ১০ জন আসামি গ্রেপ্তার হলেও ওই আসামিরা পালিয়ে যান। আসামিরা গোপনে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি সাধনসহ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, অন্তর্ঘাতমূলক কার্যসম্পাদন ও জ্বালাও পোড়াও পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন বলে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাই আসামিদের সঙ্গে আর কে কে উপস্থিত ছিল তা জানার জন্য এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম, সানাউল্লাহ মিয়াসহ প্রমুখ রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদনের শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউপর আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আমিন উদ্দিন মানিক ও সালমা হাই টুনি জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন।
শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় পাঁচ দিন এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের অপর মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে একই মামলায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ ১০ জনের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে পরবর্তী সময়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় ককটেল, প্রচুর ‘জিহাদি’ বই, দুটি বড় ছুরি ও তিনটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালসহ তিন দিনব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বুধবার সারা দেশে বিক্ষোভ এবং শুক্রবার দোয়া দিবস পালন করবে তারা।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সকল বিরোধী দলকে নেতৃত্ব শূন্য করে দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গত ৯ অক্টোবর রাতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সরকারের এ ধরনের অন্যায়, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী আচরণের নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা নেই।
তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে সরকার মানবাধিকার লংঘন করে তাদের উপর চরম জুলুম করছে। কোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের অন্যায় আচরণ কখনো কল্পনাও করা যায় না। সরকারের এ অন্যায় ও অমানবিক আচরণে আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত।
নতুন ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের একটি আইনানুগ বৈধ রাজনৈতিক দল। অথচ সরকার দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীকে প্রকাশ্যে কোন সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে না দিয়ে আমাদের আইনগত এবং সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হরণ করেই চলেছে। সরকার দেশের সংবিধান ও আইন লংঘন করে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের উপর জুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছে। সরকার জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, গুম ও হত্যা করছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশের জনগণের উপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, সরকার একে একে দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের জুলুম-নির্যাতনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও হরণ করেছে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার বলতে কোনো কিছু আর বাকি নেই। দেশের জনগণ অসহায় হয়ে পড়েছে।
কর্মসূচি : ১১ অক্টোবর বুধবার সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, আগামী ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সর্বাত্মক হরতাল এবং ১৩ অক্টোবর শুক্রবার গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য সারা দেশব্যাপী দোয়া।
বিবৃতিতে জানানো হয়, হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং ঔষধের দোকান হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।