স্টাফ রিপোর্টার :
মিটার রিডারদের ভুলে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিলে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। এমনিভাবে নগরীর জেলরোড এলাকার বাসিন্দা সিকন্দর আলী প্রতিমাসে তার বাসায় বিদ্যুৎ বিল আসে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। গত জুলাই মাসে বিল এসেছিল দুই হাজার ৭২ টাকা। কিন্তু আগস্টে বিদ্যুৎ বিল আসে ২৮ হাজার ৫৭৬ টাকা।
নগরীর মধুশহীদ এলাকার বাসিন্দা আবৃত্তিশিল্পী মোকাদ্দেস বাবুলের বাসার মিটারেরও একই অবস্থা। তার বাসায় গত মাসে বিল এসেছে ১৩ হাজার ৪২৮ টাকা। অথচ এর আগের মাসগুলোতে এক থেকে দেড় হাজার টাকার বেশি বিল আসেনি।
শুধু বাবুল ও সিকন্দর আলীই নয়, সিলেট পিডিবির চারটি দপ্তরের প্রায় ৪০ ভাগ গ্রাহকই গত আগস্টে এমন অস্বাভাবিক এমন অস্বাভাবিক বিল পেয়েছেন। গ্রাহকরা যাকে বলছেন ভুতুড়ে বিল। হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক বিল পেয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে গ্রাহকদের। অস্বাভাবিক বিলের প্রতিবাদে আন্দোলনেও নেমেছেন গ্রাহকরা।
তবে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, মিটার রিডারদের যথাযথ তদারকি ও গাফিলতির কারণে এমনটি হয়েছে। এ কারণে প্রায় পাঁচশ’ মিটার রিডারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সিলেটের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘মিটার রিডাররা ৩০ ভাগ গ্রাহকের বাসা-বাড়িতে না গিয়ে মিটার রিডিং করেছে। ঘরে বসেই আনুমানিক বিল তৈরি করেছেন। ফলে রিডিং জমা থাকায় একসঙ্গে অধিক বিল এসেছে।’
দায়ী মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগষ্ট মাসের বিল অস্বাভাবিক হলেও রিডিং ঠিক আছে। ভবিষ্যতে এ রকম আর হবে না। গ্রাহকরা কিস্তিতে বিল পরিশোধ করতে পারবেন।’
পিডিবির সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার মিলিয়ে ৭০০ মিটার রিডার ও বিল বিতরণকারীর পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। প্রায় সাত মাস পূর্বে সিলেটে বিদ্যুৎ বিল তৈরির কাজ দেওয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনকে। সিলেটের বাইরে থেকে কর্মী এনে মিটার রিডিংয়ের কাজে নিয়োজিত করে তারা। চলতি বছরের শুরু থেকেই এই মিটার রিডাররা সঠিকভাবে রিডিং করেননি। অনেকে বাসা-বাড়িতে না গিয়ে অনুমাননির্ভর রিডিংও করতেন। এ কারণে গত কয়েক মাসে মিটারে রিডিং জমা হতে থাকে। আগস্ট মাসে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ইউনিট ব্যবহার হয়েছে দেখিয়ে বিল তৈরি করা হয়। অনেক গ্রাহক জুলাই মাসেও অস্বাভাবিক বিল পান। মিটার রিডারদের এমন দায়িত্বহীনতার কারণে গত এপ্রিল মাসে প্রায় ৫শ’ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ অবস্থায় আবারও মুনসী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েটকে মিটারের ছবি তুলে (স্ন্যপশট মিটারিং সিস্টেম) বিদ্যুৎ বিল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্ন্যাপশট মিটারিং সিস্টেম চালুর পর থেকেই বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। অস্বাভাবিক বিল আসতে শুরু করেছে তাদের।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমদ বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থে কয়েক দফায় বিল পরিশোধ করার জন্য সুবিধা করে দেয়া হচ্ছে। মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটকে বিদ্যুতের ¯œ্যাপিং ও বিলিংয়ের কাজ দেওয়া হয়েছিলো। তারা ঠিক মত রিডিং দেখে বিল তৈরি না করার কারণে গ্রাহকদের মধ্যে অতিরিক্ত বিলের সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়াও অনেকে গ্রাহকের মিটারে পূর্বের অনেক ইউনিট জমে আছে। যার কারণে এক সাথে সব বিল আসার কারণে গ্রাহকরা হতাশ হয়ে গেছেন।
এদিকে, গতকাল শনিবার সকালে নগরীর সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের এক মতবিনিময় সভা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এলাইছ মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে নগরীর মিরাবাজার বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন গ্রাহকদের বিলিং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উন্মুক্ত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেছেন, বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা এক মাসের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। এটি সৃষ্টির পেছনে যেমন বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় লোক জড়িত আছেন তেমনি আমরা গ্রাহকরাও জড়িত। সাময়িক সময়ের জন্য লাভবান হতে গিয়ে আমরা স্থায়ী সমস্যা ডেকে এনেছি। এই সমস্যা দূরীভূত করতে বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা আশা করছি বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের প্রতি আন্তরিক আছেন। গ্রাহকদের যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে তারা এর সমাধান করে দিবেন।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমদ বলেন, আমরা গ্রাহদের প্রতি আন্তরিক আছি। আমরা চাই না গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। রিডারদের ভুলের কারণে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা একমাসের মধ্যে সমাধান করে দেওয়া হবে। গ্রাহকদের আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে না। গ্রাহকরা যাতে স্বাছন্দ্যে বিল পরিশোধ করতে পারে সেভাবে আমরা বিলগুলোকে কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবো।
এ উন্মুক্ত আলোচনায় আরোও অংশ নেন- নগরীর ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রাকিব তুহিন, টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন, টিলাগড় পঞ্চায়েত কমিটির সেক্রেটারী সমর উদ্দিন মানিক, টিলাগড় কেন্দ্রীয় মসজিদের মোতাওয়াল্লী অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ, বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রশাসন রুহুল আমীন, ইসমাইল মাহমুদ সুজন, শফি উল্লাহ, হিরক দে পাপলু, মুহিবুর রহমান, বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিক প্রতিনিধি সামসুল বাসিত প্রমুখ।