স্পোর্টস ডেস্ক :
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২৭ বছর পর আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল ইংল্যান্ড। বৃহস্পতিবার চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে অজিদের ৮ উইকেটে হারিয়েছে ইংলিশরা। ১৪ জুলাই লর্ডসে ফাইনাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ইয়ন মরগ্যানের দল। ইংল্যান্ড এবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠে তিনবারই রানার্স আপ হয় তারা। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ আসরে ইংলিশরা ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে পারেনি।
অন্যদিকে, পাঁচবার শিরোপা জেতা দল অস্ট্রেলিয়া এবার ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলো। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে গত ছয় আসরের মধ্যে তারা চারবার চ্যাম্পিয়ন ও একবার রানার্স আপ হয়। অজিরা প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। এরপর ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা তিন আসরে তারা শিরোপা ঘরে তুলেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে তারা বিদায় নিয়েছিল। তবে, ২০১৫ সালে শিরোপা পুনরুদ্ধার করে অজিরা। বিশ্বকাপে ১২ আসরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে খেলেছে মোট সাতবার।
বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ২২৪ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩২.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন জ্যাসন রয়। ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকেন জো রুট। অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৪৫ রান করে। অজি বোলারদের মধ্যে মিচেল স্টার্ক ১টি ও প্যাট কামিন্স ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার জ্যাসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা করে। ১৬তম ওভারে তারা দলীয় শতরান পূর্ণ করে। দলীয় ১২৪ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙে স্বাগতিকদের। মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ হন ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। রিভিউ নিয়েও তিনি বাঁচতে পারেননি। ৪৩ বলে তিনি করেন ৩৪ রান।
এরপর রয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন জো রুট। রুট মাঠে নেমেই ঝড়ো ব্যাট করতে শুরু করেন। দুজনের ব্যাটে দারুণ খেলছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার দেয়া বিতর্কিত আউটের সিদ্ধান্তে ফিরে যান রয়। প্যাট কামিন্সের করা ইনিংসের ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন তিনি। বাউন্সার ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন রয়। কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়নি। বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক আলেক্স ক্যারির হাতে। অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা আউটের আবেদন করলে আম্পায়ার ধর্মসেনা আঙুল উঁচিয়ে দেন।
কিন্তু রয় সিদ্ধান্তটি মানতে পারেননি। মাঠে খানিকক্ষণ তিনি আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করেন। তিনি বারবার বলছিলেন বলটি ওয়াইড ছিল। তবুও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। রিভিউ নেয়ারও সুযোগ ছিল না রয়ের। কারণ, এর আগে বেয়ারস্টো রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের রিভিউ শেষ হয়ে যায়। রাগে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে মাঠ ছাড়েন রয়। ৬৫ বলে ৯টি চার ও পাঁচটি ছক্কার সাহায্যে ৮৫ রান করেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে রয়ের এটি চতুর্থ অর্ধশত। এই বিশ্বকাপে একটি সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। এরপর জো রুট ও ইয়ন মরগ্যান ৭৯ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
বাার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২২৩ রান করে অলআউট হয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। দলের পক্ষে চারজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে রান করেন। সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন স্টিভেন স্মিথ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন আলেক্স ক্যারি। মিচেল স্টার্ক করেন ২৯ রান। ২২ রান করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে ক্রিস ওয়েকস ৩টি, জফরা আর্চার ২টি, আদিল রশীদ ৩টি ও মার্ক উড ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৮ উইকেটে জয়ী ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংস: ২২৩ (৪৯ ওভার)
(ডেভিড ওয়ার্নার ৯, অ্যারোন ফিঞ্চ ০, স্টিভেন স্মিথ ৮৫, পিটার হ্যান্ডসকম্ব ৪, আলেক্স ক্যারি ৪৬, মার্কাস স্টয়নিস ০, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২২, প্যাট কামিন্স ৬, মিচেল স্টার্ক ২৯, জ্যাসন বেহরেনডর্ফ ১, নাথান লায়ন ৫*; ক্রিস ওয়েকস ৩/২০, জফরা আর্চার ২/৩২, বেন স্টোকস ০/২২, মার্ক উড ১/৪৫, লিয়াম প্লানকেট ০/৪৪, আদিল রশীদ ৩/৫৪)।
ইংল্যান্ড ইনিংস: ২২৬/২ (৩২.১ ওভার)
(জ্যাসন রয় ৮৫, জনি বেয়ারস্টো ৩৪, জো রুট ৪৯*, ইয়ন মরগ্যান ৪৫*; জ্যাসন বেহরেনডর্ফ ০/৩৮, মিচেল স্টার্ক ১/৭০, প্যাট কামিন্স ১/৩৪, নাথান লায়ন ০/৪৯, স্টিভেন স্মিথ ০/২১, মার্কাস স্টয়নিস ০/১৩)।
ম্যাচ সেরা: ক্রিস ওয়েকস (ইংল্যান্ড)।