চোখের জল আর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় জকিগঞ্জে প্রতিমা নিরঞ্জন

55

জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিজয়া দশমীতে সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর ভারত বাংলার দুই তীরের কাষ্টমঘাটে শনিবার বসেছিলো দুই বাংলার মানুষের মিলনমেলা। চোখের জল আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে কুশিয়ারার দুই তীরে জড়ো হন হাজারো পূজারী ভক্ত অনুরাগী, দর্শনার্থী ও শুভার্থীরা। এ উপলক্ষে হিন্দু, মুসলিম পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে জকিগঞ্জ পৌর শহরের কাষ্টমঘাট ও ভারতের কাষ্টমঘাটস্থ অখন্ড মন্ডলী মন্দিরের প্রাঙ্গন। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এ শ্লোগান সত্য আবারো প্রমাণিত হলো দুই তীরের মানুষের উপস্থিতিতে।
বাঙ্গালী হিন্দুদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা নিরঞ্জনে কাস্টমঘাটে হিন্দু সম্প্রদায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সর্বস্থরের মানুষ অংশ নেয়। পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সর্তক অবস্থায়। ঢাকঢোল, কাসর, করতাল, মন্দিরা, বাঁশি এবং শঙ্খ’র ধ্বনির আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা এলাকা। মর্তলোক থেকে কৈলাশে দেবীকে বিদায় জানাতে নেচে গেয়ে মাতোয়ারা হন ভক্তরা।
ভক্তরা সেজেছিলেন উৎসবের বর্ণিল রঙে। বিজিবি এবং বিএসএফের সদস্যরাও মেতে উঠেছিলেন উৎসবে। কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরে প্র্রতিমা নিরঞ্জনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ছিল জোরদার। বিজিবি, পুলিশ মজুত ছিল নদীর তীরে। লক্ষ করা গেছে ভারতের করিমগঞ্জেও আইন শৃংখলা বাহিনী ছিলো সর্তক অবস্থায়।
জকিগঞ্জের ৯৩ টি পূজা মন্ডপ থেকে ট্রাকযোগে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন ঘাটে আসেন ভক্তরা। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে সীমান্ত ঘেঁষা এ নদীপারের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব। দীর্ঘদিন ধরেই এ উৎসব জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর কাষ্টমঘাটে ও ভারতের অখন্ড মন্ডলী মন্দিরের পাশের ঘাটে চলে আসছে।
এদিকে প্র্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে কাস্টমঘাটে পূজা পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় বিশ্বাসের সঞ্চলনায় এক অনুষ্ঠানে ভক্ত অনুরাগী, দর্শনার্থী ও শুভার্থীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানান, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, ঢাকা উত্তর সিটির ৩৫ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রমনা শাহবাগ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল মুনির চৌধুরী, মুনির চৌধুরীর সহধর্মীনি ডা. মমতাজ বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক সরকার, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত পাল, আওয়ামীলীগ নেতা শেখ আব্দুল করিম, পৌর কাউন্সিলর রিপন আহমদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের আহবায়ক বিভাকর দেশমূখ্য, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য ফয়েজ আহমদ, পৌরসভা যুবলীগের সদস্য হিরণজিৎ বিশ্বাস, কাশ্যাপকল্যাণ পরিষদের সভাপতি নবেন্দু রায়, পাচু বিশ্বাসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জকিগঞ্জ পূর্জা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথ ও সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় বিশ্বাস জানান, জকিগঞ্জে ৯৩ টি পূজা মন্ডপেই শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দূর্গোপূজা শেষে কুশিয়ারা নদীর কাষ্টমঘাটে প্রতিমা বিসর্জনে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের মিলন মেলা যেন সৌহার্দ ও সম্প্রীতির মেলাবন্ধন। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনে সকলের সহযোগিতা পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।