নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
জামালগঞ্জের শীতল পাটি দেশ বিখ্যাত। শীতল পাটি ব্যবহারে আরাম আদায়ক ও সৌখিনতার প্রতীক। প্রাচীন কাল থেকেই এর ব্যবহার গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে। সামাজিক, ধর্মীয়, বিয়ে-সাদী থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান সহ ঘরের নিত্য প্রায়োজনীয় ব্যবহার এই পাটির। শীতল পাটির সারা দেশে প্রসিদ্ধ হওয়ায় এর চাহিদা ও প্রচুর। এ শিল্পের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। জামালগঞ্জ থেকে বোনা এই পাটি গুলো সিলেটের শীতল পাটি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। অনেকেই জানেনা এই পাটি গুলো বোনা হচ্ছে কোথায়। সাধারণত ক্রেতারা বড় কোন শপিংমল অথবা কোন ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর বা কোন কুটির শিল্পের দোকান থেকে ক্রয় করে আনেন। জামালগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫-২০ টি গ্রামের কয়েক সহস্রাধিক মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন শীতল পাটি বোনা। জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কদমতলী, চানপুর, দুর্গাপুর, সোনাপুর গ্রামের প্রায় ৫০০টি পরিবার প্রায় শত বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত বলে জানা যায়। পূর্ব পুরুষরা এ পেশার সাথে জড়িত, কর হিসেবে এলাকায় পরিচিত তারা। শীতল পাটির গ্রাম খ্যাত কদমতলী গিয়ে দেখা যায়, আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই শীতল পাটি তৈরীতে ব্যস্ত। মেয়ে, বউরা পাটি বুনছে, আর পুরুষরা তৈরীর উপকরণ প্রস্তুত করে দিচ্ছে। শীতল পাটি তৈরীর প্রদান উপকরণ মুক্তা গাছ। স্থানীয় ভাবে উৎপন্ন এ গাছ চাহিদা পূরণ করতে না পারায় বাহিরে থেকে পাশ্বর্বতী ধর্মপাশার মধুপুর, তাহিরপুর, মোহনগঞ্জের জৈনপুর, নেত্রকোণার কেন্দুয়া, সুনামগঞ্জ সদরের কুতুবপুর, রামেশ্বর পুর এ সমস্ত এলাকা থেকে এগুলো সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, মুক্তা থেকে প্রথমে বেত করা হয় শুধু শীতল পাটির বেতগুলোকে সিদ্ধ করে ১ দিন ভালোভাবে রৌদ্রে শুকাতে হয়। একজন লোকের একটি শীতল পাটি তৈরী করতে ৫ দিন সময় লাগে, আর ২ জনে করলে ২-৩ দিনের ভিতর সম্ভব বলে জানান। আর সাধারণ পাটি তৈরীর ক্ষেত্রে ২ দিনেই করা সম্ভব বলে তারা জানায়। শীতল পাটি তৈরীর পর নিজেরা তারা স্থানীয় বাজার গুলোতে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে। স্থানীয় বাজারের কিছু ব্যবসায়ী পাটি গুলো সুনামগঞ্জ, সিলেট ও ভৈরব হয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রেরণ করেন। এক একটি শীতল পাটি ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সাধারণ পাটি ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। কদমতলীর শান্তনা কর, হেলেন কর, শুভা রানী কর, নমিতা কর, মমতা কর জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষরা পাটি বোনার কাজ কাজ করে গেছে, আমরা চেষ্টা করেও এই কাজ ছাড়তে পারছি না। আমরা কাজ করছি, সে হিসাবে পারিশ্রমিক পাচ্ছি না। তারা আরও জানান, সরকার যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করত তাহলে আমাদের শীতল পাটি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানী করা যেত। জামালগঞ্জ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন শিল্পী জানান, আমাদের এলাকার ঐতিহ্য এই পাটি শিল্প আস্তে আস্তে এগুলো বিলীন হতে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে এই শিল্পকে টিকানো সম্ভব হবে।