জেলা-উপজেলায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারি হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। আরো কয়েক কোটি টাকা খরচ করে চিকিৎসা সরঞ্জাম বসানো হয়। কিন্তু দেখা যায়, দুপুর ১টা-দেড়টার মধ্যেই পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারও আগে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগী চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ফিরে যায়। স্থাপনা-সরঞ্জাম অব্যবহৃত পড়ে থাকে। অনেক রোগী বাধ্য হয় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অতি উচ্চমূল্যে চিকিৎসা নিতে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়েছিলেন সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করার জন্য। চিকিৎসাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারকরাও এই ধারণাটি এগিয়ে নিতে আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তীকালে করোনা মহামারির কারণে এ ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেই পরিকল্পনা এবার বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। আগামী ১ মার্চ থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৫০টি উপজেলা, ২০টি জেলা ও পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সেবা চালু হতে যাচ্ছে।
দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সকাল ও বিকাল দুই বেলায় চিকিৎসাসেবা চালু করা গেলে প্রতিদিন একই স্থাপনা থেকে দ্বিগুণসংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশে রোগী যে আধিক্য তার প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত চিকিৎসাব্যবস্থায় একটি মৌলিক পরিবর্তন সূচিত করবে বলেই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এটি আরো ফলপ্রসূ হবে যদি ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতিসহ সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত করা যায়। ঢাকার বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে শুধু যে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হয় তা নয়, সেগুলোতে যোগ্য চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নন, এমন অনেকে নিজেদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যাও কম নয়। প্রায়ই বিভিন্ন অভিযানে ধরাও পড়ছে তেমন চিকিৎসক। কাজেই রোগীরা শুধু অতিরিক্ত খরচই করছে না, প্রতারিতও হচ্ছে। আবার প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ না থাকায় অনেক চিকিৎসক ঢাকার বাইরে যেতে বা থাকতে চান না। বিশেষজ্ঞ অনেক চিকিৎসকই মনে করেন, এই ব্যবস্থা চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রাখার ক্ষেত্রেও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। আর এখানে যে প্র্যাকটিস চলবে, নৈতিকতার দিক থেকেও সেটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। এ জন্য অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের নানাভাবে প্রণোদনাও দেওয়া যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২০১১ সাল থেকেই এই মডেলে বহির্বিভাগে বিশেষায়িত চেম্বার পরিচালনা করা হচ্ছে। মাত্র ২০০ টাকার টিকিট দিয়ে ২৪টি বিভাগে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতিদিন ছয় শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিএসএমএমইউয়ে এটি করা গেলে অন্যত্রও তা করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকতে হবে। আমরা আশা করি, শুধু কয়েকটি কেন্দ্রে নয়, সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এই বৈকালিক সেবা শিগগিরই চালু হবে।