স্পোর্টস ডেস্ক :
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সাব্বির রহমান এবং নাসিরের সাথে গুরুত্বপূর্ণ জুটিও গড়ে তুলেছেন। তার এই কৃতিত্বে বাংলাদেশ লড়াকু সংগ্রহ করে। তবে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় যে ভুলটি করলেন, তাতে কতটা মূল্য বাংলাদেশকে দিতে হয়, কে জানে?
বিপজ্জনক ওয়ার্নারকে স্ট্যাম্পিং করার খুব সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিক। মেহেদী হাসান মিরাজের বল ওয়ার্নারকে ফাঁকি দিয়ে কিছুটা নিচু হয়ে মুশফিকের নাগালের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তিনি বলটি লুফে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। বলটি তার পায়ে লাগে। যতক্ষণে তিনি বলটি কুড়িয়ে নেন, ততক্ষণে ওয়ার্নার সহজেই তার জায়গায় ফিরে আসেছেন।
এখন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২ উইকেটে ২১০ রান। ওয়ার্নার ৮১ এবং হ্যান্ডসকোম্প ৬৩ রানে ক্রিজে রয়েছেন।
এবার তাইজুলের আঘাত : প্রথম আঘাতটি হেনেছিলেন মোস্তাফিজ। সেই আঘাত সামলে নিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এবার তাইজুল ইসলাম আঘাতটি হেনে বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়ে এনেছেন। অস্ট্রেলিয়ার স্কোর এখন ২ উইকেটে ৯৮ রান। উল্লেখ্য বাংলাদেশ এর আগে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল।
৩০৫ রানে অলআউট বাংলাদেশ : অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আগের দিন সাব্বির রহমান ৬৬, সৌম্য সরকার ৩৩, মোমিনুল হক ৩১ ও সাকিব আল হাসান ২৪ রান করে আউট হন। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৬২ ও নাসির হোসেন ১৯ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিন শেষ করেন।
দ্বিতীয় দিন নিজের ইনিংসটা খুব বেশি বড় করতে পারেননি মুশফিকুর। ৬৮ রানেই থেমে যান তিনি। ২৫২ মিনিটের লড়াকু ইনিংসে ১৬৬ বল মোকাবেলা করে ৫টি বাউন্ডারি হাকাঁন মুশি। তবে নাসির চেষ্টা করেছিলেন নিজের ইনিংসটা বড় করতে, পুরোপুরি সফল না হলেও ৯৭ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। তার ১১৫ মিনিটের ইনিংসে ৫টি চার ছিল।
এছাড়া টেল-এন্ডারদের মধ্যে মেহেদি হাসান মিরাজ ১১ ও তাইজুল ইসলাম ৯ রানে ফিরেন। শুন্য রানে অপরাজিত থাকেন মুস্তাফিজুর রহমান। অস্ট্রেলিয়ার নাথান লিঁও ৯৪ রানে ৭টি ও অ্যাস্টন আগার ৫২ রানে ২টি উইকেট নেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ বাংলাদেশের : অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। অসিদের বিপক্ষে টেস্ট ফরম্যাটে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং লংগার ভার্সনে এটি ৩৭তম সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৪২৭ রান। ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওপেনার শাহরিয়ার নাফীসের ১৩৮ রানের কল্যাণে ৪২৭ রান করেছিলো টাইগাররা।
চট্টগ্রাম টেস্টের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ৩০৪ রান। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৪ রান করেছিলো বাংলাদেশ।
গিলেস্পিকে টপকে গেলেন লিঁও : চলমান চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯৪ রান দিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অফ-স্পিনার নাথান লিঁও। তাই ৬৯ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তার উইকেট সংখ্যা ২৬৩টি। ফলে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় সাত নম্বরে উঠে এলেন তিনি। সাত নম্বরে উঠতে গিয়ে পেছলে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার জেসন গিলেস্পিকে। ৭১ ম্যাচে ২৫৯ উইকেট শিকার করেছিলেন গিলেস্পি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর মালিক শেন ওয়ার্নের। ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন ওয়ার্ন। এই তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে সাত নম্বরে রয়েছেন লিঁও। শীর্ষ সাতের মধ্যে ওয়ার্ন ও লিঁও’ই দু’জন স্পিনার।
হেরাথ-ম্যাকগিল-কানেরিয়ার পাশে লিঁও : টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ও দেশের দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে ৭ বা ততোধিক উইকেট শিকারের কীর্তি গড়লেন অস্ট্রেলিয়ার অফ-স্পিনার নাথান লিঁও। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানে ৭ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান তিনি।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল বোলার স্পিনার লিঁও। ৩৬ দশমিক ২ ওভার বল করে ৯৪ রান দিয়ে ৭ উইকেট নেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১১তমবারের মতো পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন লিঁও।
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মত ৭ উইকেট শিকার করলেন তিনি। এই ইনিংসের বোলিং ফিগারই বাংলাদেশের বিপক্ষে তার সেরা পারফরমেন্স। এমন পারফরমেন্স করার পথে শ্রীলংকার রঙ্গনা হেরাথ-অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ও পাকিস্তানের দানেশ কানেরিয়ার পাশে বসলেন লিঁও।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টের এক ইনিংসে ৭ বা ততোধিক উইকেট নেয় চতুর্থ স্পিন বোলার হলেন লিঁও। এর আগে এমন কীর্তি গড়েছেন তিন স্পিনার হেরাথ-ম্যাকগিল ও কানেরিয়া। অবশ্য এমন কীর্তি গড়তে গিয়ে এক দিক থেকে অনন্য হলেন লিঁও। কারন লিঁও হলেন ডান-হাতি অফ-স্পিনার। আর অন্যরা কেউই অফ-স্পিনার নন।
২০০৬ সাল ফতুল্লা টেস্টে ১০৮ রানে ৮ উইকেট নেন নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকগিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তার সেরা বোলিং ফিগার। শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয়, ম্যাকগিলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও এটি।
ম্যাকগিলের মতো টেস্ট ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং ফিগার বাংলাদেশের বিপক্ষেই করেছেন কানেরিয়া। ২০০২ সালে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রানে ৭ উইকেট নেন তিনি।
ম্যাকগিল বা কানেরিয়ার মত বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার দাঁড় করাতে পারেননি হেরাথ। বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরাথের সেরা বোলিং ফিগার ৮৯ রানে ৭ উইকেট। ২০১৩ সালে কলম্বোতে এমন নজির গড়েন হেরাথ।
অস্ট্রেলিয়ার টিম বাসে পাথর নিক্ষেপ!
চট্টগ্রাম টেস্টে অংশ নেয়া অস্ট্রেলিয়ার টিম বাসে একটি ছোট পাথর বা ঢিল নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে ‘ধারণা’ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে সোমবার সন্ধ্যায় খেলোয়াড়রা যখন হোটেলে ফিরছিলেন, তখন এই ঘটনা ঘটে বলে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো আজ মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে। তবে এতে কোনো খেলোয়াড় আহত হয়নি বলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছে।
ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। সেইসাথে চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম এবং আশপাশের এলাকার নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা ম্যানেজার সিন ক্যারল বলেছেন, ‘গত রাতে হোটেলে ফেরার পথে অস্ট্রেলিয়ান টিম বাসের জানালা ভেঙ্গে যায়। কেউ এতে আহত হয়নি।’
তিনি বলেন, টিম নিরাপত্তা সদস্য বর্তমানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছেন। ধারণা করা হচ্ছে ছোট পাথর বা ঢিল থেকে এই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। দলের যাতায়াতপথে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে এখন পর্যন্ত যত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে আমরা খুশি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নেয়া ব্যবস্থায় আমরা স্বস্তিতে রয়েছি।
মাইলফলক স্পর্শ করলেন নাসির হোসেন : টেস্ট ক্রিকেটে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের নাসির হোসেন। চট্টগ্রাম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে এ মাইলফলক স্পর্শ করলেন নাসির। এক হাজার রান করতে নাসির হোসেন খেলেছেন ১৯ টেস্ট। ব্যাটিং করেছেন ৩০ তম ইনিংসে।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম টেস্টে এক হাজার রান করা ব্যাটসম্যানের নাম মুমিনুল হক। এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মাত্র ১১ টেস্টেই পার করেছেন এক হাজার রানের চৌকাঠ। ১৬ টেস্ট লেগেছিল সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের। নাসির হোসেনের সমানসংখ্যক টেস্ট লেগেছে রাজিন সালেহ, সাকিব আল হাসানের। এছাড়া ২০ টেস্টে এক হাজার রান পূর্ণ করেছেন বর্তমান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এ ম্যাচের আগে ১৮ টেস্টে নাসির হোসেনের রান ছিল ৯৯৪। মাইলফলক থেকে নাসির ছিলেন ৬ রান দূরে। ইনিংসের ৮৪ তম ওভারের পঞ্চম বলে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লায়নের বলে অফসাইডে চার হাঁকিয়ে টেস্টে এক হাজার রান পূর্ণ করেন নাসির। বাংলাদেশের চৌদ্দতম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার রানের চৌকাঠ পার করলেন তিনি।
২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল এ অলরাউন্ডারের। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এ মাঠেই এক হাজার রান পার করলেন নাসির।