জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে সুনামগঞ্জ-৩ আসন। জাতীয় রাজনীতিতে এ আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে এ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আলহাজ্ব আবদুস সামাদ আজাদ ও ফারুক রশীদ চৌধুরী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বর্তমানে দুইটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন এমএ মান্নান। যে কারণে এ আসনটি জাতীয় রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও এ নির্বাচনী এলাকা ঐতিহ্যবাহী। এছাড়া জগন্নাথপুর প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে জগন্নাথপুরের প্রবাসীদের অনেক অবদান রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় না আসলেও এ আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন জোর লবিং। সমর্থকরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীরাও আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের ৩, বিএনপির ৩, মহাজোটের ১ ও জাতীয় পার্টির ১ সহ মোট ৮ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আ’লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও যুক্তরাজ্য আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক লে. কর্ণেল অব. সৈয়দ আলী আহমদ ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। কেন্দ্রীয় জমিয়ত নেতা সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ও লন্ডন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহীদুর রাহমান (শহীদ)।
এর মধ্যে আ’লীগের এমএ মান্নানের বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামে। তিনি এ আসনে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত এমপি হয়ে সততার সাথে দুইটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন সজ্জন মানুষ হওয়ায় আবারো আগামী সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং তিনি আবারো দলীয় প্রার্থী হলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানান। আজিজুস সামাদ ডনের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার ভূরাখালি গ্রামে। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র হওয়ায় এবং বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমএ মান্নানের সাথে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তিনিও পিছিয়ে নেই। আগামী সংসদ নির্বাচনে আজিজুস সামাদ ডনও আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন এবং তিনি নৌকা প্রতীক পেলে অনায়াসে নির্বাচিত হবেন বলে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন। সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলা সৈয়দপুর গ্রামে। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্য আ’লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে অনেকে জানান।
বিএনপির এমএ মালেক খানের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার হাসান-ফাতেমাপুর গ্রামে। তিনি ইতোপূর্বে অসংখ্য নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তিনি অসংখ্য বার নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে মাঠে কাজ করলেও পরে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি অনেকবার মাঠে কাজ করার কারণে স্থানীয়ভাবে অনেকে তাঁকে এমপি সাহেব বলে সম্বোধন করেন। এবারের নির্বাচনে তিনি বিএনপির দলীয় প্রার্থী হলে সহজে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন। লে. কর্ণেল অব. সৈয়দ আলী আহমদের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। ইতোপূর্বে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে এ আসনে নির্বাচন করে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন। স্থানীয়ভাবে তাঁর গ্রহন যোগ্যতা বেশি রয়েছে। তিনি বিএনপির প্রার্থী হলে আ’লীগ-বিএনপির নির্বাচন জমজমাট হয়ে উঠবে এবং তিনি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে অনেকে জানান। কয়ছর এম আহমদের বাড়ি জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ছিলিমপুর গ্রামে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও এ আসনে দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন বলে অনেকে জানিয়েছেন। বিএনপি তথা চার দলীয় জোটের প্রার্থী জমিয়ত নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী এ আসনের সাবেক ১৪ মাসের এমপি ছিলেন। যে কারণে নির্বাচনী এলাকায় তাঁর পরিচিতি ও গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিনি চার দলীয় জোটের একক প্রার্থী হলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। শাহীদুর রাহমান (শহীদ) এর বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার বড়ফেছি গ্রামে। তিনি বর্তমানে লন্ডন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং সততার সাথে যুক্তরাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আগামী নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে তিনি নতুন মুখ। তবে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁর সমর্থকরা জানিয়েছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কোন প্রার্থী কোন দলের হয়ে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেবেন তা সময়ের অপেক্ষা বলে স্থানীয় একাধিক ভোটাররা জানান।