সিলেটি নাগরী লিপি আমাদের স্বকীয়তাকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করেছে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা শ্লোক এবং প্রবাদ-প্রবচন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে করেছে ঐতিহ্যের দাবীদার। কালের প্রবাহে সিলেটিদের অনেকে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিস্মৃত হতে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে সিলেটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্বকীয়তা রক্ষায় মো. আব্দুর রউফ রচিত ‘সিলেটের প্রবাদ-প্রবচন’ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
কৈতর সিলেট-এর উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার গবেষক মো. আব্দুর রউফ’র প্রথম গ্রন্থ ‘সিলেটের আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচন’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। গত সোমবার দরগাহ গেইটস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর হলে বিশিষ্ট সাংবাদিক-গবেষক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট-এর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন ও সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল ইক চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ লালা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ, সিলেট-এর অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, সিলেট এম. সি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি, সিলেট ক্যাডেট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আহমদ চৌধুরী, সিলেট এম.এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের এনেসথেশিয়া বিভাগের সাবেক প্রধান প্রফেসর ডা. হেলাল উদ্দিন, শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজ-এর অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম এবং অনুভূতি প্রকাশ করেন গ্রন্থের লেখক বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুর রউফ। বিশিষ্ট সাংবাদিক-সংগঠক সেলিম আউয়ালের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে গ্রন্থ ভিত্তিক মূল আলোচনা উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী।
সাহিত্যকর্মী তাসলিমা খানম বীথির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেমুসাসের সহ সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক মুহম্মদ বশিরুদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আতিকুর রহমান, গ্রন্থকারের শিক্ষক এখলাসুর রহমান, এডভোকেট মহব্বত খান, কবি মুকুল চৌধুরী, অধ্যাপক এনামুল হক, গবেষক-কবি মুসা আল হাফিজ, কবি নাজমুল আনসারী, কবি ছয়ফুল আলম পারুল। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মো. আব্দুল বাছিত।
প্রফেসর ড. নজরুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট অঞ্চলের লোকদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা আছে। কিন্তু অনেকে তা ব্যবহার করতে হীনমন্যতায় ভোগে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির স্বকীয়তা রক্ষায় আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা শ্লোক ও প্রবাদ-প্রবচন সম্পর্কে রচিত মো. আব্দুর রউফের গ্রন্থটি ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কবি অধ্যক্ষ কালাম আজাদ বলেন, সিলেট অঞ্চলসহ সমস্ত বাংলাদেশের প্রত্যয় অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা শ্লোক বা প্রবাদ-প্রবচন বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রতœ ভান্ডার। মানুষের চিত্ত জাগানিয়া এই প্রবাদ-প্রবচনগুলোর বিদ্যমান শিল্প-সৌন্দর্য্য হৃদয়কে প্রফুল্ল করে এবং মূল্যবোধের চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রফেসর হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জী বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছি, এটা আমাদের জন্য যেমনি আনন্দের বিষয়, তেমনি অহংকারের। লোকসাহিত্য সংরক্ষণ ও চর্চায় ‘সিলেটের প্রবাদ-প্রবচন’ বাংলা সাহিত্যে অমূল্য সংযোজন।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মো. আব্দুর রউফ বলেন, সিলেট ইতিহাস-ঐতিহ্যে অনেক সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে সিলেটের আঞ্চলিক প্রবাদ-প্রবচনগুলোকে পরিচয় করে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে মানুষের চিত্তকে প্রফুল্ল করতে ছোট্ট প্রয়াস।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান বলেন, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও প্রসারে ‘সিলেটের প্রবাদ-প্রবচন’ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। লোকসাহিত্যের মূল্যবান মণিমুক্তাসমূহ ক্রমাগত বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে নতুন প্রজন্মের জন্য এর স্বাদ আস্বাদন করার ব্যবস্থা করতে এই উদ্যোগ সাহিত্য সাধনার দ্বারকে উন্মোচিত করবে। বিজ্ঞপ্তি