কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা ভারী বৃষ্টিতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আদমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিলকপুর গ্রাম এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে চারটি গ্রামের বসত বাড়ি ও ফসলি জমি নিমজ্জিত করেছিল। পরবর্তীতে আরো তিন দফা বন্যায় এলাকার সব কিছু বিনষ্ট হলে আর বসে থাকতে পারেননি গ্রামবাসী। সরকারীভাবে দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়নে কাজ করার কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ করে ভেঙ্গে যাওয়া ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত শুরু করেন। ঈদের ছুটি আসা গ্রামের চাকুরীজীবিরা, করেজ পড়–য়া ছাত্রসহ প্রায় ২০০ লোক মিলে বস্তায় বালু ভরে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, চাকুরীজীবী, কলেজ ছাত্র সবাই মিলে প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতরে কাজ করেন। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের কথা শুনে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন, প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন।
জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন সম্প্রতি বিতরণকৃত ভিজিএফ চালের খালি ২০০ বস্তা, প্যানেল চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন তার মৎস্য খামারে মাছের খাবারের খালি আরও ৩০০ বস্তা দিয়ে সহায়তা করেন। নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে আলাপে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দু বিজয় শঙ্কর চক্রবর্তী আরও ১০০০ খালি বস্তা দিয়ে সহায়তা করেন। তাছাড়া গ্রামবাসীরা নিজেরাও ২ টা থেকে শুরু করে ৫টি করে বস্তা নিয়ে আসেন।
বাঁধ এলাকায় দেখা যায় কেউ কেউ খালি বস্তা বালু ভর্তি করছেন। আর যুবক ও ছাত্ররা এসব বালু ভর্তি বস্তা নিয়ে বাঁধের কাছে স্থাপন করছেন। কাজের সুবিধার্থে আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরের সবার খাবারের ব্যবস্থা করেন।
ইউপি সদস্য মো: হেলাল উদ্দীনও স্বেচ্ছাশ্রমে কর্মরত গ্রামবাসীরা জানান, এ বাঁধ ভেঙ্গে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তিনবার দক্ষিণ তিলকপুর গ্রামের ১৩০ বাড়ি, উত্তল তিলকপুর গ্রামের ৮৫টি বাড়ি, ঘোড়ামারা গ্রামের ১৫০টি বাড়ি ও হুমেরজান গ্রামের ১০০টি সব মিলিয়ে ৪৬৫ টি বাড়িসহ চারটি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল। আবহাওয়ার অবস্থায় বোছা যায় আরও টানা বৃষ্টিপাত হতে পারে। তখন আবারও এ ভাঙ্গন এলাকা দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে চারটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ চিন্তা ভাবনায় গ্রামবাসীরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজ করেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, গ্রামবাসীরা নিজেদের রক্ষায় নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে এত বড় কাজ করছেন শুনে তিনিও বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে তাদের কাজে সহায়তা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলায় তিনি ১০০০ খালি বস্তা পাঠান।