তা-রে-ক -লি-ম-ন
“আমাকে ভাগিয়ে নিয়ে যাও চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত একা থাকতে পারবনা, তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাও, নয়তো নিজের হাতে গলা টিপে মেরে ফেলো, এ কথা বলে নাছিমা নিলয়ের গলা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, তখন নিলয় নাছিমাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে আরে পাগলি কাঁদছো কেনো আমার কাছ থেকে তোমায় কেউই আলাদা করতে পারবেনা, মাত্র একটা বছর অপেক্ষা করো আমি বিদেশ গিয়েই মা বাবা কে ফোন করে তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো।
নিলয় নাছিমা একে অন্যের খালাতো ভাই বোন খালার বাড়িতে বেড়ানোর ফাঁকে নিলয় নাছিমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে, একে অন্যেকে ছেড়ে থাকতেই পারেনা,তাই কয়দিন পরপর নিলয় নাছিমাকে দেখতে খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়, বেশ আনন্দে কাটতে থাকে তাদের দিন।
নিলয় চলে যায় বিদেশ তাদের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যায় শুধু একমাত্র কথা হয় ওয়াটসাপ ইমুতে, কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অন্ধকার নেমে আসে নিলয়ের জীবনে, প্রতিদিনের মত নিলয় নাছিমাকে ওয়াটসাপ ইমুতে কল দিচ্ছে, কিন্তু নাছিমা নিলয়ের সাথে কথা বলতে চাইছে না, একটার পর একটা কল আর এস এম এস দেয়ার পরও যখন নাছিমা নিলয়ের সাথে কথা বলছিলো না, তখন নিলয় একটু চিন্তায় পড়ে যায় আবার ভাবে, হয়তো নাছিমা অভিমান করেই এসব করছে, আর অভিমান করবেই বা না কেনো, যখানে নাছিমা নিলয়ের সাথে একটু সময় কথা না বলে থাকতে পারেনা সেখানে আজ তিনদিন হয়ে গেছে নাছিমার সাথে নিলয়ের কোনো কথা হয়নি।
নিলয়ের মনটা কেমন জানি করছে তাই আর নাছিমাকে ওয়াটসাপ ইমুতে কল না দিয়ে, ডাইরেক্ট কল করলো, রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন উঠাচ্ছে না, নিলয় বার বার ট্রাই করছে, হঠাৎ কে যেনো ফোন উঠালো, কন্ঠটা বেশ পরিচিত, তাই প্রথমেই নিলয় বলে উঠলো রুমি নাছিমাকে ফোনটা দে ওর সাথে আমার কথা আছে, রুমি নাছিমার চাচাতো বোন নিলয়েরও পূর্বপরিচিত, চাচাতো বোন তাই নাছিমার ফোন
নিয়ে রুমি গেম খেলছিলো, নিলয়ের মুখে নাছিমার কথা শুনে রুমা, হুট করেই বলে উঠলো কি নিলয় ভাইয়া আপনি জানেননা নাছিমার বিয়ে
হয়ে গেছে, আজ ওর স্বামী ওকে নিয়ে বউ ভাতে এসেছে।
রুমির কথায় নিলয় হেসে উঠে, নিলয় রুমির কথাতে তেমন পাত্তাই দিচ্ছেনা, নিলয় মনে করছে রুমি ওর সাথে দুষ্টুমি করছে, কারণ ও সব সময়ই দুষ্টুমি করে থাকে হয়তো এখনো দুষ্টুমি করছে, নিলয় রুমিকে বললো প্লিজ রুমি, দুষ্টুমি ছেড়ে নাছিমাকে ফোনটা দাও, ওর সথে আমার জরুরী কথা আছে, রুমি বুঝতে পারলো নিলয় এখন রেগে যাচ্ছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে নাছিমার কাছে ফোন নিয়ে ছুঠে গেলো, কিন্তু নাছিমা নিলয়ের কথা শুনে ফোন হাতে নিতে চাইছেনা, আর ওপাশ থেকে নিলয় চিৎকার করে বলছে, প্লিজ নাছিমা ফোনটা ধরো আমার সাথে কথা বলো তোমার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে, প্লিজ, সরি বলছি এই রকম আর কখনওই হবেনা প্রমিস করলাম এবার কথা বলো প্লিজ, ইচ্ছে না থাকলেও অবশেষে নাছিমা কথা বললো তবে কথাটি হয়তো নিলয়ের জন্য বেশ আনন্দের নয়, ওপাশ থেকে নাছিমা বলতে লাগলো,তুমি আমকে ভুলে যাও, মা বাবার পছন্দের ছেলের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে, আমি আর এখন তোমার নয় আমার স্বামী আছে সংসার আছে, আর দয়া করে আমাকে আর এই নাম্বারে ফোন দিয়ও না, আমার স্বামী দেখলে আবার অন্য কিছু ভাববে, ভালো থেকো
আর আমাকে ভুলে যাও পারলে ক্ষমা করে দিও বলে নাছিমা ফোনটা রেখে দেয়, নিলয় কথা বলার আর কোনো সুযোগই পায়নি, আর নাছিমার কথাগুলো শুনার পর নিলয় স্তব্ধ হয়ে যায় কথা বলার ভাষাও যেনো সে হারিয়ে ফেলে, ফোনটা হাত থেকে রেখেই নিলয় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, নাছিমার কথা শুনে বুঝা যাচ্ছিলো নাছিমা সত্য বলছে কারণ নাছিমা কখনো নিলয়ের সাথে এই রখম সিরিয়েস হয়ে কথা বলেনি,
অভিমান করলেও অভিমানের ভাষা অন্য রখম বুঝা যায়, নিলয় খুব কান্না করছে ভাবতে পারছেনা এখন কী করবে নাছিমা কেনো তার সাথে এমন করলো কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছেনা নিলয়, কেনো এমন হলো, কেনো ই বা নাছিমা তাকে এভাবে ধোঁকা দিলো, কী তাঁর অপরাধ, কী করে নাছিমা তাকে এত সহজে ভুলে যেতে পরলো, মনে হচ্ছে এই তো সেদিন নাছিমা নিলয়কে বুকে জড়িয়ে বলছিলো, নিলয় ভাইয়া তুমি আমাকে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাও, তোমাকে ছেড়ে এক মুহূর্ত থাকতে আমার ভালো লাগেনা, প্লিজ ভাইয়া তুমি আমাকে নিয়ে যাও তোমার সাথে রাস্তায় গাছতলায় থাকতেও আমি রাজি তবে তোমাকে হারাতে পারবো না।
নিলয় ভাবছে তবে কী সেদিনের কথাগুলো নাছিমা শুধু মুখ দিয়েই বলেছিলো তাঁর সব কিছুই ছিলো ছলনা, কিন্তু নাছিমা তাঁর সাথে ছলনা করতে যাবে কেনো নিলয়ের কিসের অভাব ছিলো, নাছিমা যদি বাড়িতে সবার কাছে তাদের সম্পর্কের কথা বলতো অবশ্যই বাড়ির সবাই রাজি হতেন, তাহলে নাছিমা কেনো তাদের সম্পর্কের কথা বাড়িতে কাউকে জানায়নি, নাকি বাড়িতে কেউ রাজি হননি, নিলয় ফোন হাতে নিয়ে নছিমার মা, নিলয়ের খালাম্মাকে ফোন করে জানতে চায় কী হয়েছিলো, নাছিমাকে কেনো ওনারা এত তাড়াহুড়া করে বিয়ে দিয়ে দিলেন, নিলয়ের খালাম্মা ফোন ধরেই ভালো মন্দ জিজ্ঞেস না করেই, বলে উঠলেন, নিলয়, বাবা তুমি দুই একদিন পর ফোন দিও, আমি খুব ব্যস্ত আছি কথা বলতে পারবোনা বলেই ফোন রেখে দিয়ে চলে যান।
নাছিমার ভাবী দূর থেকে ওনাদের কথা শুনছিলেন নিলয়ের সাথে ওনার দেখা না হলেও ফোনে অনেকদিন নাছিমা আর নিলয়ের সাথে এক সাথে কথা বলেছেন, নিলয় বিদেশ যাবার পরই ওনাদের বিয়ে হয়, নিলয়ের খালাম্মা তাড়াহুড়া করে চলে যাওয়ায় ফোন ড্রপ করতে ভুলে যান, এই সুযোগে নাছিমার ভাবী ফোনটা হাতে নিয়ে ওনার রুমে চলে যান, আর এই দিকে নিলয় কাঁদছে আর বলছে, খালাম্মা কথা বলুন, প্লিজ কথা বলুন, নিলয়ের কান্না কান্না কন্ঠ আর আহাজারি শুনে নাছিমার ভাবীর চোখেও জল চলে আসে….
নিলয় ওপাশ থেকে ভাবীর কন্ঠ শুনতে পায় ভাই নিলয় তোমাকে কী বলে সান্ত্বনা দেবো সে ভাষা আমার জানা নেই, নাছিমার এমন খবর শুনে তোমার ভালো না থাকারই কথা সত্যি বলতে আমারও খুব খারাপ লাগছে ভাই, যাক যা হবার তা হয়ে গেছে বাস্তবকে মেনে নিতে হবে, তবে তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন টা হাতে নিয়েছি, তখন নিলয় ওপাশ থেকে বলে উঠে কী কথা ভাবী আমাকে খোলে বলেন প্লিজ, নাছিমা কেনো আমার সাথে এমন করলো আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা, নাছিমার বিয়ে হয়ে গেছে।
মাত্র তিন দিন আগেই ওর সাথে আমার কথা হলো কই, ও তো আমাকে কিছুই বলেনি, প্লিজ ভাবী বলেন আমাকে কী হয়েছিলো যার কারণে নাছিমা আমায় ভুলে গেলো, ওপাশ থেকে ভাবী ভাই নিলয় আমি যতটা জানি তোমাদের দুই পরিবারের মধ্যে কী একটা কথা কাটাকাটি নিয়েই আমার শ্বশুর শাশুড়ি রাগ করেই নাছিমাকে বিয়ে দিয়েদেন, এর বেশি কিছু আমার জানা নেই, ভাবীর কথা শেষ হলেই নিলয় ভাবীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফোনটা কেটে, নিলয় তাঁর মাকে ফোন করে, কিন্তু মায়ের ফোন বন্ধ থাকায়, সত্যটা আর জানা হয়নি, নিলয় নাছিমাকে নিয়ে ভাবছে আর কেঁদে কেঁদে বলছে, দুই পরিবারের দ্বন্দ্বে না হয় মা বাবা তোমাকে বিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তুমিতো পারতে একটিবার আমাকে বলতে, শুধু নিজের সুখটাই দেখলে তুমি অভিমানটাই তোমাদের কাছে বড় হয়ে গেলো, কেনো এমন করলে নাছিমা কেন?
তুমি আসলেই স্বার্থপর একটিবার বলে গেলেনা কী দোষ ছিলো আমার আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কী ছিলো কারণ। (চলবে)