রাণী ভিক্টোরিয়ার দেশে

75

মিজানুর রহমান মিজান

( পূর্ব প্রকাশের পর)
স ঙ্গদের সাথে সাক্ষাৎ করে বিদায় নিয়ে আমি চলে আসি ষ্টেপনী গ্রীণস্থ বাসায়। অত:পর যে ক’দিন আমি লন্ডনে ছিলাম অধিকাংশ সময় জুম্মার নামাজ ইষ্ট লন্ডন মসজিদে আদায় করার চেষ্টা করেছি। উদ্দেশ্য অধিক মানুষের সাথে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মানুষের সংস্পর্শ প্রাপ্তি এবং সেখানে প্রকাশিত সকল বাংলা পত্রিকা সংগ্রহ করা। যাক আমি অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সেখানে যে সমস্ত বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হয় তাদের নাম এখানে উল্লেখ করতে চাই। সাপ্তাহিক জনমত, সুরমা, নতুন দিন, পত্রিকা, ইউরো বাংলা, বাংলা পোষ্ট, বাংলাদেশ, লন্ডন বাংলা, বাংলা টাইমস্ ও বাংলা নিউজ ইত্যাদি। এ সবক’টি  পত্রিকা পূর্ব লন্ডন থেকে এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হয়ে থাকে। আরো একটি মাসিক পত্রিকা দর্পণ নামে প্রকাশিত হয়ে থাকে। তবে সুরমা, পত্রিকা ও জনমত ফ্রি পাওয়া যায় না। বাকিগুলি ফ্রি বিতরণ করা হয় শুক্রবারে মসজিদের সম্মুখে রেখে। আমি বার্মিংহাম একদিন গিয়েছিলাম, সেখানে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত সবাইকে বাংলা ভয়েস নামে একটি সাপ্তাহিক এর কপি পেয়েছি ও দেখেছি। আবার সেখানে প্রকাশিত হয় জেনেছি মিলেনিয়াম, অভিযাত্রা ইত্যাদি নামের পত্রিকা। তবে আমি এগুলি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এদিকে সেখানে রয়েছে বাংলা ভাষায় নিয়মিত টিভি চ্যানেল এ টি এন বাংলা, চ্যানেল এস, চ্যানেল আই ও বেতার বাংলা নামক রেডিও ইত্যাদি। যা দ্বৈত নাগরিকত্বের এবং বাংলা ভাষাভাষি ও নুতন প্রজন্মের নিকট বাংলাকে জনপ্রিয় করে তোলা, শিখন, পঠন-পাঠনের সহায়তাকারী হিসেবে উপস্থাপন করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিয়মিত প্রচারিত হয়। আবার আমি ভ্রমণ সমাপ্ত করে আসার পূর্বে ২৫ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় দেশ টিভি’র। তাছাড়া ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইংরেজী দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা বিনা মূল্যে বিতরণের নিমিত্তে রাখা হয় জনসাধারণের পাঠের জন্য।
এক্ষণে মির্জা আস্হাব বেগ সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন মনে করছি। আসহাব বেগ বিশ্বনাথ উপজেলার মিরের চর গ্রামের মির্জা পরিবার খ্যাত এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬৪  খ্রীষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মির্জা জাফর বেগ ও মাতার নাম মরহুমা পরিজা বানু। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলে সমাপন করে রাম সুন্দর হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে এস . এস . সি কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হন। অত:পর সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচচ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে বি এস সি ( অনার্স) ও এম এস সি-তে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৯২ সনে পি এইচ ডি করার মানসে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। সেখানে লিডস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত থাকাবস্থায় পিজিসিই ( পোস্ট গ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ) লাভ করেন। এ কোর্স শেষ করেই তিনি একজন কোয়ালিফাইড টিচার হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এর মধ্যে তিনি ইষ্ট এন্ড কমিউনিটি স্কুলে অনেক দিন শিক্ষকতা করেন এবং সেখানে হেড টিচার হিসেবেও কাজ করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ব্যবসাও পরিচালনা করেন। মূলত তিনি বিলেতে আসার পর থেকে পড়াশুনা ও শিক্ষকতা করলে ও এর পাশাপাশি শুরু থেকেই ব্যবসা ও পরিচালনা করে আসছিলেন। এক সময় ব্যবসায় খুবই ভালো করতে থাকলেন এবং চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণরূপে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন।
বর্তমানে তিনি বেঙ্গল এয়ার ট্রাভেলস্ এন্ড বি এম ফাইনেন্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার। তাছাড়া এল এল বি ( অনার্স) সমাপ্ত করার পর যুক্তরাজ্যের একটি অন্যতম ল’ফার্ম জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েট এর ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজার হিসেবে তিনি কাজ করছেন।
ছাত্রজীবনে একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখাসহ কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মির্জা আসহাব বেগ জাতির প্রতি দায়িত্ব পালন তথা মানুষের অধিকার কায়েম করতে গিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার কর্র্তৃক ঢাকায় ১৯৮৫ সালে গ্রেফতার বরণ করতে হয়েছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২ সালে এস.এস.সি পরিক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য বিশ্বনাথবাসীর পক্ষ থেকে স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হন।
এছাড়াও তিনি ছাত্র জীবন থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সমাজ কল্যাণমূলক কাজে, বৃটেনে বাঙালি কমিউনিটির কল্যাণে আত্ম-নিবেদিত। তিনি শিশু কিশোর মাসিক পত্রিকা গোলাপ কুঁড়ির সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাঙালিদের বৃহত্তম সংগঠন গ্রেটার সিলেট ডেভলাপমেন্ট এন্ড ওয়েল ফেয়ার কাউন্সিলে ( জিএসসি ) ’র সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। কর্তব্য পরায়ণ, নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল ও সমাজ সচেতন আসহাব বেগ অত্যন্ত সুনামের সহিত পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলস্থ বেঙ্গল ট্রেভেলস পরিচালনায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। মির্জা আসহাব বেগ ২০০৮ খ্রীষ্টাব্দে জিএসসি ইউকে’র জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ইতিপূর্বে  তিনি জিএসসি’র কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট, তিনবার কেন্দ্রীয় জয়েন্ট সেক্রেটারি, জিএসসি সাউথ-ইষ্ট রিজিয়নের দু’বার সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাডাও তিনি বর্তমানে নুসরা ইন্টারন্যাশনেল ( সেবামূলক সংগঠন ) এর চেয়ারপার্সন, বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টেও ট্রাস্টি, বিশ্বনাথ ইয়ুথ আ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বিশ্বনাথ প্রবাসী সংঘের ই.সি মেম্বার ছিলেন। মির্জা আসহাব বেগ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় জালালাবাদ ছাত্র কল্যাণ সমিতির ১৯৮৭-৮৮-৮৯ সেশনে সাধারণ সম্পাদক, পরে জালালাবাদ ছাত্র কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ছিলেন এ ফাউন্ডেশনের তখন চেয়ারম্যান। ঢাকায় অবস্থানরত কিছু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “জালালাবাদ শিক্ষা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান  প্রকল্প ” এর একজন ডাইরেক্টার হিসেবে তখন থেকেই মির্জা আসহাব বেগের ব্যবসা ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান লাভ শুরু হয়, যা তাঁকে যুক্তরাজ্যে এসে প্রত্যাশিত সফলতা দান করে। ছাত্র জীবনে মির্জা আসহাব বেগ সিলেট ক্যাডেট কলেজে সুরমা হাউসের স্পোর্টস সেক্রেটারি, সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রথম পুনর্মিলনী ও দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আহবায়ক, ওল্ড ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন অব সিলেট ( ওকাস ) এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ( ১৯৮৯-৯১ ) ও ’৯২  খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং রাম সুন্দর হাই স্কুলের (৯ম-১০ম শ্রেণীর ) অ্যাসিস্টান্ট স্কুল ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বনাথ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তিনি এ পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।
খেলাধূলার প্রতি ও মির্জা আসহাব বেগের গভীর অনুরাগ রয়েছে। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ টিমের নিয়মিত ফুটবলার ও ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের ফুটবল টিমের নিয়মিত খেলোয়াড। ১৯৮৭-৮৯ খ্রীষ্টাব্দে এ ডিপার্টমেন্টের ফুটবল ক্যাপ্টেন এবং ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক বনভোজন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ছিলেন। ক্যাডেট কলেজে পডাশুনা শেষে বাডিতে অবস্থান কালে তিনি উদীয়মান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী কালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়। ক্লাব গঠনের পর তিনি বিশ্বনাথে লীগ ভিত্তিক “ সিলভার কাপ ” চালু করেন। উহার নামকরণ করা হয় “ সিলভার কাপ ”। বিলেত যাবার পর মির্জা আসহাব বেগ সুরমা প্রিণ্টিং এন্ড পাবলিকেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এর ডিরেক্টর। ২০০২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে তাঁর উদ্যোগে ঢাকা থেকে “ মাসিক গোলাপ কুঁড়ি” প্রকাশিত হচেছ। তিনি এটার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি। লন্ডনে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে তিনির একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে ট্রেভেলস্ এজেন্সি, ল’ অ্যাসোসিয়েটস , মর্টগেজ ও ফাইন্যান্স উল্লেখযোগ্য। দেশে ও তিনির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি সিলেটে “ আর্ক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এর চেয়ারম্যান। স্বদেশে বিদেশে বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী খ্যাতিমান এ কৃতি সন্তানের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি আমি কায়মন বাক্যে মহান আল্লাহর দরবারে।  (চলবে)