খাদ্য উৎপাদনে ঈর্ষণীয় উন্নতি আমলে নিতে হবে

33

 

সারা বিশ্বেই খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য সংকটসহ নানা ধরনের আলোচনা উঠে এসেছে। বিশেষ করে, এর আগে জাতিসংঘ তথ্য প্রকাশ করেছিল, বিশ্বের ৫৮টি দেশের প্রায় ২৫৮ মিলিয়ন মানুষ ২০২২ সালে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। যখন সারা বিশ্বেই খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায়, তখন যদি দেশে খাদ্য উৎপাদনে ইতিবাচক বিষয় পরিলক্ষিত হয়, তবে স্বাভাবিকভাবেই তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, খাদ্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে উন্নীত করেছে। বিশেষ করে কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ফলে সামগ্রিক এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়।
জানা যাচ্ছে, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এছাড়া অতীতের খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। এ যেন খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে খাদ্য উৎপানে অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। তবে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার, খাদ্য নিরাপদত্তাহীনতায় দেশের ২৪ শতাংশ মানুষ- এমনটিও সাম্প্রতিক সময়ে জানা যাচ্ছে। ফলে যখন খাদ্যশস্য উৎপাদনের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় দেশের ২৪ শতাংশ মানুষ, এটা এড়ানোর সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের খাদ্য সংকটকে ইঙ্গিত করে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ সেই বাস্তবতা বদলেছে। কেননা, আজ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এখন ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ১৪৪টি দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে। এখন সেই ঝুড়ি ভরে উপচে পড়ছে খাদ্যশস্য। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। আমরা মনে করি, এই সলফতাকে ধরে রাখতে হবে। আরও কৃষির উন্নয়ন ঘটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া কোনো আবাদি জমি যেন পড়ে না থাকে, সচেতনতা বাড়ানো, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিক বিষয় আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
তথ্য মতে, স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। এর পরের ৫০ বছরে মানুষ বেড়েছে দ্বিগুণ, আর আবাদি জমি কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। অথচ দেশে এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে চার গুণ বেশি। জানা যায়, ভুট্টাসহ এর পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টন। দেশের খোরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে এখন কৃষির অবদান ৪ শতাংশ। কৃষিতে দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে- যা সামগ্রিকভাবেই অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।
এই আলোচনাও উঠে আসছে যে, ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কৃষিনির্ভর। দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি করোনা, টানা দুই বছর খরা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা এফএও। কিন্তু বাংলাদেশের খাদ্যের কোনো সংকট হয়নি। যখন দেশের খাদ্য সংক্রান্ত এই বিষয়গুলো উঠে আসছে, তখনই পালিত হলো বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৩। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য, নিরাপদ খাদ্যশস্য রপ্তানিতেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এবার খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘পানিই জীবন, পানিই খাদ্য। কেউ থাকবে না পিছিয়ে।’
সামগ্রিকভাবে আমরা বলতে চাই, খাদ্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে উন্নীত করেছে- এটি আমলে নিতে হবে এবং এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ, তদুপরি বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ- যা অত্যন্ত আশাপ্রদ। দেশের ২৪ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় এটি আমলে নেওয়ার পাশাপাশি, খাদ্য শস্য উৎপাদনের অগ্রগতি ধরে রাখতে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।