জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা

10

স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলমন্ত্রই ছিল জয় বাংলা শ্লোগান। বাংলা তথা বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যয়, সুদৃঢ় অঙ্গীকার এই শ্লোগানের ভেতর নিহিত। জাদুকরী শব্দ দুটো উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে স্বাধীনতাকামী বাঙালির শরীর মনে বিদ্যুৎ খেলে যেত। সে হয়ে উঠত অকুতোভয় লড়াকু। অন্যদিকে এই শ্লোগান কানে আসা মাত্রই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ত। জয় বাংলা শ্লোগান রাষ্ট্রীয়ভাবে এতকাল জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ঘোষিত না হলেও এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একাত্তরের আলোয় স্নাত দেশের সকল মানুষ এটিকে হৃদয়ে ধারণ করেছে একান্ত নিজের ও স্বজাতির স্বদেশপ্রেমের জাদুকরী ধ্বনি হিসেবেই। দুঃসময়ে ও দুর্যোগে এ উচ্চারণ তাকে সাহস ও শক্তি দিয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় শ্লোগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে। কোন কোন ক্ষেত্রে ‘জয় বাংলা’ বলতে হবে, সেটি সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেছেন, যেমন সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তি, রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাষ্ট্রীয় বা সরকারী অনুষ্ঠান শেষে ‘জয় বাংলা’ বলবেন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ্যাসেম্বলি, সভা-সেমিনারের ক্ষেত্রে ‘জয় বাংলা’ বলতে হবে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় শ্লোগান হবে বলে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট।
জয় বাংলা এমন একটি শ্লোগান, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে তাদের সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে প্রবলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছিল। জয় বাংলা শ্লোগান ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালির অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। সফল অপারেশন শেষে বা যুদ্ধ জয়ের পর অবধারিতভাবে মুক্তিযোদ্ধারা চিৎকার করে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিজয় উদযাপন করত।
১৯৬৯ সাল থেকেই জয় বাংলা শ্লোগান ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনকালে বঙ্গবন্ধু প্রায় প্রতিটি জনসভায় জয় বাংলা বলেছেন। নির্বাচনের পর ১৯৭১-এর ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন যখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন জয় বাংলার বহুল ব্যবহার শুরু হয়। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে প্রদত্ত তার বিশ্বখ্যাত সাতই মার্চের ভাষণ সমাপ্ত করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করে। এই ভাষণের পর থেকে এটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ‘জয় বাংলা’ ব্যবহার করা হতো।
পঁচাত্তরের পনেরই আগষ্টে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার পর পাকিস্তানপন্থীরা জয় বাংলা শ্লোগানকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। সেই সরকারগুলোর আমলে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান ছিল প্রায় নিষিদ্ধ ও অপরাধতুল্য। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ছিল দু’পক্ষ; স্বাধীনতার পক্ষ আর স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্বকারী শ্লোগান জয় বাংলা নিয়ে তাই স্বাধীনতাবিরোধীরা আপত্তি তুলবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশবাসী সন্তুষ্ট যে, দীর্ঘকাল পরে হলেও জাতীয় শ্লোগান হতে চলেছে জয় বাংলা।