কাশ্মীর সংকট ॥ সীমান্তে পাকিস্তানের সেনা সমাবেশ, পাক অধিকৃত অঞ্চলে বাঙ্কারও নির্মাণ করছে সেনাবাহিনী ॥ আলোচনায় বসতে রাজি ভারত

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান-ভারতের তীব্র উত্তেজনার মাঝে জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে বেশ কিছু উদ্বেগজনক খবর আসছে। ২০ বছর আগে ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের সময় যেভাবে সীমান্তে বাঙ্কার তৈরি করেছিল পাকিস্তান; বর্তমানে সেভাবেই বালতোরো সেক্টরের কাছে স্কার্দু এলাকার সম্মুখভাগে বাঙ্কার নির্মাণ করছে পাক সেনাবাহিনী। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের স্কার্দু এলাকার সম্মুখভাগের বিপরীত পাশেই কারগিলের অবস্থান। একেবারে সীমান্ত রেখা ঘেঁষে এই বাঙ্কার তৈরি করছে পাকিস্তান।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান সীমান্তরেখা ঘেঁষে ১০ থেকে ১২ ফুট এবং কোথাও কোথাও ২০ থেকে ১২ ফুট উঁচু বাঙ্কার তৈরি করছে। এর মধ্যে প্রায় ছয়টি বাঙ্কারের নির্মাণ কাজ শেষের দিকে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বাঙ্কারগুলো পাকিস্তানের কমান্ড পোস্ট হতে পারে। এটি দুটি কারণে করতে পারে। পাকিস্তান ওই এলাকায় তাদের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো কিংবা অস্ত্র মজুদের জন্য অথবা সেখানে স্থাপনা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
নিয়ন্ত্রণরেখার পাশে পাকিস্তান এমন এক সময় এ ধরনের বাঙ্কার তৈরি করছে, যখন প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধের দামামা দিন দিন বেড়ে চলছে। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা-সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর প্রতিবেশি পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দুই দেশের মাঝে কথার লড়াই শুরু হয়।
পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিক সব প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। গত ১৬ আগস্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে কাশ্মীর সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক হলেও বিতর্কিত কাশ্মীর নিয়ে কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ।
কাশ্মীর সংকটকে কেন্দ্র করে ভারতকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এমনকি আগামী অক্টোবর অথবা নভেম্বরে ভারতের সঙ্গে শেষবারের মতো পারমাণবিক যুদ্ধ হতে পারে বলে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হুমকিও দিয়েছেন।
স্পিকার সম্মেলনে পাক-ভারত বাগ্যুদ্ধ : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছে পাকিস্তান। মালদ্বীপের পার্লামেন্টে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্পিকারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্মেলনে’ পাকিস্তানের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি এই আহ্বান জানান। অধিকৃত কাশ্মীরের নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কর্তৃক অসাংবিধানিক পদক্ষেপ ও নৃশংসতা সম্পর্কে তার অংশগ্রহণকারীদের অবহিত করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি যখন সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন ভারতের প্রতিনিধি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। অনেকটা হট্টগোলের মধ্যেই বক্তব্য চালিয়ে যান কাসিম খান। অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির লোকসভার স্পিকার। কাসিম খান বলেন, পুরো অধিকৃত কাশ্মীরজুড়ে ব্যাপকভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মানুষকে তাদের ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কাশ্মীর ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছে পাকিস্তান। তিনি বলেন, উপত্যকায় যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যা জনগণের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাতিসংঘের প্রস্তাবনা এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে এর সমাধানের জন্য ভারতকে চাপ দিতে হবে এবং কাশ্মীরের সমস্যাটিকে যথাযথ পর্যায়ে উত্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান নৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে কাশ্মীরকে সমর্থন করছে। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের মনোভাব দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল।
আলোচনায় বসতে রাজি ভারত : কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে ফের দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে নিজেদের এক সেনা নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে ভারত। অবশ্য, এ জন্য ইসলামাবাদকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিহার করতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে দিল্লি।
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদে সোমবারও পাকিস্তানের করাচিতে বিক্ষোভ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় তারা নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়।
অঞ্চলটি থেকে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবিও করে তারা। তবে পরিস্থিতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইরমান খান প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন। তবে এ জন্য ইসলামাবাদকে জঙ্গিবাদের পথ পরিহার করতে হবে বলে জানিয়েছেন, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ক্রিসটস স্টাইনিয়া-নাইডসের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।