স্টাফ রিপোর্টার :
কোম্পনীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা ধসে আবারও দুই পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এরা হচ্ছে-উপজেলার ছনবাড়ী গ্রামের জালাল উদ্দিন (৩৫) ও ভাগারপাড় গ্রামের চুনু মিয়া (৩৫)। এই নিয়ে এক সপ্তাহে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হলো।
কয়েক শ’ বছর পূর্বে ভারত থেকে শাহ আরেফিন (রঃ) নামের এক ওলি আসা যাওয়ার সময় এখানে বিশ্রাম নিতেন। সেই থেকে এলাকাবাসীর কাছে এটি ‘শাহ্ আরেফিন টিলা’ নামে পরিচিত। প্রায় আড়াই শ’ একর সু-উচ্চ টিলার শীর্ষে এখনো লাল নিশান চিহ্নিত স্থান শাহ আরফিনের আসন হিসেবে রাখা হয়েছে। এক সময়ের দৃষ্টিনন্দন এই টিলা এখন সৌন্দর্য ও আবেদন দুই-ই হারিয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে ‘শাহ্ আরেফিন টিলা’র অবস্থান। পাথর খেকোরা ইতিমধ্যেই টিলার শতকরা ৭০ ভাগ ধ্বংস করে ফেলেছে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে। এই টিলায় পাথর উত্তোলনের কাজে শ্রমিক হয়ে যারা কাজ করছে তাদের জন্য এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে টিলাটি। প্রায়ই এখানে টিলা ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। পাথর শ্রমিকরা টিলাধসে মৃত্যুবরণ করলেও থানায় কোনো মামলা হয় না। ব্যবস্থা নেয়া হয় না ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে। সমঝোতাসহ টাকার বিনিময়ে মাটি চাপায় মৃতের ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেয়া হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গত এক সপ্তাহে শাহ্ আরেফিন টিলায় টিলা ধসে প্রাণ হারিয়েছে ৩ পাথর শ্রমিক। সর্বশেষ গত রবিবার দুপুরে টিলা ধসে দুই শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে। এরা হলো-উপজেলার ছনবাড়ী গ্রামের জালাল উদ্দিন (৩৫) ও ভাগারপাড় গ্রামের চুনু মিয়া (৩৫)। কোম্পানীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার মিয়া আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর টিলা ধসে আনোয়ার (৩৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আইনী ঝামেলা এড়াতে ময়না তদন্ত ছাড়াই তাদের দাফন করা হয়ে থাকে। আবার কখনো স্বজনদের সাথে সমঝোতা করে মৃত্যুর ঘটনা চাপা দেয়া হয়ে থাকে। আর এটা করা হয় পাথর ব্যবসায় আইনী ঝামেলা এড়াতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায়ই শাহ্ আরেফিন টিলা ধসে পাথর শ্রমিক মারা যাচ্ছে। তবে গর্তের মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজসে নিহত শ্রমিকদের ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। বিনিময়ে নিহতদের পরিবারকে দেয়া হয় কিছু টাকা। শাহ্ আরেফিন টিলা মৃত্যুর গর্তে পরিণত হয়েছে। এখানে শ্রমিকদের জীবনের কোন মূল্য নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে এখানে আইনী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন জানান, শাহ্ আরেফিন টিলায় দুর্ঘটনার সংবাদ আমরা পেয়েছি। তবে নিহতের স্বজনেরা কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। আইনী ঝামেলা এড়াতে সংশ্লিষ্টরা এসব মৃত্যুর ঘটনাগুলো ধাপাচাপা দিচ্ছেন বলে ওসি জানান।