বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে অনিয়মের মধ্য দিয়ে পিএসসি ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা শুরু

70

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে ওসমানীনগর-বালাগঞ্জের দুটি উপজেলায় ৬ হাজার ৯শ ৪৮ জন পরীক্ষার্থী নিয়ে পিএসসি ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র দেখা যায় বড় বড় ভুল। প্রবেশ পত্রে আজবগুবি ভুল দেখে শিক্ষকসহ অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করে। প্রবেশপত্র সংশোধনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে ধর্না দিয়েও এর সমাধান পাওয়া যায়নি। মাদরাসাগুলোতে কক্ষ পরিদর্শক দেয়া হয় ৮ বছর আগের দেয়া তালিকা অনুযায়ি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাদরাসা প্রধানদের কোন প্রকার পরামর্শ ছাড়া পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হয়। যার ফলে অনেক সমস্যার শিকার হচ্ছেন মাদরাসার পরীক্ষার্থীরা। সমাপনী পরীক্ষার কার্যক্রমের ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন থেকে বালাগঞ্জ শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হলেও শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বিষয়টি কর্ণপাত না করে তিনি দুই উপজেলার পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। অন্যদিকে শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রায় ১৫/২০টি বিদ্যালয় থেকে কোন শিক্ষককে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য না দিলেও উৎসুক আদায়ের মাধ্যমে উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর সকল শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে দিয়েছেন। ফলে গতকাল রবিবার দুই উপজেলার ৬/৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত আলী প্রবেশ পত্রে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানান, পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়নি। বালাগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনগড়াভাবে তিনি একাই দুই উপজেলার কাজ করেছেন। ওই শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার জন্য  অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্রে ভুল হয়েছে।
সমাপনী পরীক্ষার কার্যক্রমের ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন থেকে বালাগঞ্জ শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে জানানো হলেও শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বিষয়টি কর্ণপাত না করে তিনি দুই উপজেলার পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ফলে দুই উপজেলার সমাপনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র তৈরীর জন্য শিক্ষক কর্তৃক শুদ্ধ তালিকা দেওয়া হলেও শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টদের গাফলাতি ও দায়িত্বহীনতার  কারনে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্রে নাম, পিতার নাম, মাতার নামসহ জন্ম তারিখে ভুল হয়েছে। ভুলে ভরা প্রবেশ পত্র পেয়ে একাধিক শিক্ষকসহ অভিভাবকরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে কোন কাজ হয়নি।
অভিভাবক মজম্মিল আলী, নুরমিয়া, আশব আলী, মনোফর আলীসহ অসংখ্য অভিভাবকরা জানান, আমাদের ছেলে-মেয়েদের প্রবেশ পত্রে একাধিক স্থানে ভুল হয়েছে। আমরা বার বার শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলেও সদুত্তর পাইনি। শিক্ষা কর্মকর্তারা  সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে প্রবেশ পত্রে এমন আজগুবি ভুল হত না। এদিকে হস্তিদুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রবেশপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বেসরকারী রেজি: প্রাথমিক ব্যিালয়। যার ফলে শিক্ষক, কমিটি ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করে ক্ষোভ।
উপজেলার একাধিক শিক্ষকরা জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান উৎসুক আদায়ের মাধ্যমে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কেন্দ্র সচিব না করে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষককে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দিয়েছেন। মাদরাসার প্রধানদের নিয়ে পরামর্শ সভা করা হয় না কেন জানতে চাইলে এক মাদরাসার প্রধানকে ‘বেশি কথা বলেন কেন?’ বলে ধামক দেন শিক্ষা অফিসার। দুই উপজেলার ২৩ টি কেন্দ্রের মধ্যে একাধিক কেন্দ্রে অতিরিক্ত শিক্ষক দিয়েছেন। আবার কোন কেন্দ্রে চাহিদার চেয়ে কম শিক্ষক দায়িত্ব পালনের জন্য দেয়া হয়েছে। মাদরাসার ইবতেদায়ী শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও সিনিয়র দাখিল (মাধ্যমিক) স্তরের শিক্ষকদের দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। বিষয়টি ইবতেদায়ী শিক্ষকদের প্রাপ্য-এ মর্মে সংবাদকর্মীরা পরীক্ষার প্রায় ১৫নি পূর্বে বালাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করানোর পরও তিনি কর্ণপাত করেননি। অনেক শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয় যার নাম এ মারাসায় নেই।
বালাগঞ্জ মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মুমিত বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শতাধিক সমাপনী পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর প্রবেশ পত্রে ভুল হয়েছে। ওসমানীনগরের তাজপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের একশত জন পিএসসি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫ জন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রে ভুল রয়েছে।
আলহাজ্ব মিনা বেগম নুরানীয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বলেন, ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার ব্যাপারে আমাদের সাথে কোন প্রকার পরামর্শ করা হয় না। আমার মাদরাসায় কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষক দেয়া হয়েছে ইদ্রিস আলী। এ নামে কোন শিক্ষক নেই।
ওসমানীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৌরভ পাল জানান, আমি ওসমানীনগর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেও আমাকে সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে কোন কিছুতে অবগত করা হয়নি। পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কাজকর্ম বালাগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তা করছেন। উনারা মনগড়া ভাবে দুই উপজেলার কাজ করে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রবেশ পত্রে আজগুবি ভুলের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এটা পরবর্তীতে সংশোধন করে দেয়া হবে।