কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হয়েছে দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এর দন্ড।
ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে একাত্তরের নৃশংসতম যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীকে। শনিবার দিনগত রাত (২২ নভেম্বর) রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার।
অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসি দেওয়া হলো সাকাকে। এখন পর্যন্ত রায় কার্যকর হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়া অপরাধের মধ্যেও এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, ব্যাপক নিধনযজ্ঞ, দেশান্তর, নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যা, ষড়যন্ত্রের মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে।
এর মধ্যে সাকা চৌধুরীকে যে চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতে হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবক-দানবীর অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে গণহত্যা, রাউজানের ঊনসত্তরপায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা, এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে হত্যা। ট্রাইব্যুনালে সাকার বিরুদ্ধে আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে এসব অভিযোগ ছিল যথাক্রমে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে।
এদিকে একাত্তরের আলবদর কমান্ডার মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার (২১ নভেম্বর) দিনগত রাত বারটা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশের জন্য আরও একটি নতুন ইতিহাস রচিত হলো। স্বাধীন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কোনো সাবেক মন্ত্রীর ফাঁসির ঘটনাও এই প্রথম।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, আটক ও নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যার মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। পাশাপাশি সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ও প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুললেন মুজাহিদ। তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে এটি ছিল ৬ নম্বর অভিযোগে।
এদিকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ দেখা করার সময় সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘সরকারতো কত কিছুই বানাবে, কত কাগজ তৈরি করবে।’
কারাগারের ভেতরে দেখা করে আসার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন সাকা চৌধুরীর বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘কে বলেছে এমন বাজে কথা।’
হুম্মাম আরও বলেন, ‘আমি যখন বাবাকে বলি সরকার বলছে এ কথা। উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচনে তাকে হারাতে না পেরে এখন তার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’
এর আগে রাত সাড়ে নয়টার পরপরই কারাগারে শেষ দেখা করতে ঢোকে সাকা চৌধুরীর পরিবার। রাত পৌনে ১১টার দিকে তারা বের হয়ে আসেন।
সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, দুই ছেলে হুম্মাম ও ফাইয়াজ কাদের চৌধুরীসহ মোট ১৮ ভেতরে প্রবেশ করেন।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে শেষ দেখা করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (২১ নভেম্বর) রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর থেকে তারা দেখা করে বের হন। পরিবারের মোট ২৫ সদস্য ছিলেন এ সাক্ষাতে।
এর আগে, রাত ১১টার পরপর তারা দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন। মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই জাহান, দুই ছেলেসহ মোট ২৫ সদস্য ভেতরে ঢোকার সুযোগ পান।