হবিগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৪৫০ জন বিদেশির নিরাপত্তা জোরদার

45

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৩টি দেশের প্রায় ৪৫০ জন বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এসব বিদেশির বেশির ভাগ কর্মরত আছেন নবীগঞ্জের বিবিয়ানা, সামিট পাওয়ার ও শাহজীবাজারের ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। যার ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে রাখা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনিতে। বিদেশিদের তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা ও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের তিনটি বিশেষ টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান কূটনৈতিকপাড়ায় ইতালীয় নাগরিক, রংপুরের একটি গ্রামে এক জাপানি নাগরিক খুন এবং সর্বশেষ দিনাজপুরে আরেক বিদেশির ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে বিদেশি নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। যার জন্য হবিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। জেলা শহর, উপজেলা সদরসহ যেসব স্থানে বিদেশিরা রয়েছেন তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।
পাশাপাশি মাঠে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও কাজ করছেন।
নিরাপত্তাব্যবস্থা তদারকি করছেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত মো. শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর সার্বেল) সাজেদুর রহমান ও সদর সার্কেল মাসুদুর রহমান মনিরসহ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের সমন্বয়ে রয়েছে আরও একটি স্পেশাল টিম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ বিদেশি নাগরিকের তালিকা তৈরি করেছে। পুলিশের দেয়া তথ্যমতে জেলায় বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, চীন, জাপান, কোরিয়া, শ্রীলংকা, তুরস্ক, চেক প্রজাতন্ত্র ও থাইল্যান্ডসহ ১৩টি দেশের ৪২০ থেকে ৪৫০ জন বিদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে নবীগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে আছেন ৪৫ থেকে ৫০ জন, মাধবপুরের শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১৭৫ জন, নবীগঞ্জের সামিট পাওয়ারে ১৫০ জন থেকে ১৭০ জন। সদর উপজেলার ওলিপুরে স্কয়ার গ্র“পে দুইজন, প্রাণ আরএফএলে সাতজন, সিপি বাংলাদেশ লিঃ এ একজন, মাধবপুরের সায়হাম গ্র“পে ছয়জন ও স্টার ফরসেলিনসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন অনেক বিদেশি নাগরিক।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কর্মরত আছেন বিদেশি নাগরিক। এ সব নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ।
এ ছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনে জেলায় সফর করছেন আরও অনেক বিদেশি। যারা হবিগঞ্জে অবস্থান করছেন না তাদের ক্ষেত্রেও নেয়া হয়েছে আলাদা নিরাপত্তাব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাসুদুর রহমান মনির জানান, আমরা আবাসিক হোটেলগুলোকেও নির্দেশনা দিয়েছি কোনো বিদেশি নাগরিক হোটেলে অবস্থান করা মাত্র জেলা পুলিশকে তার সব ধরনের তথ্য দিতে।
তিনি আরও জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মকর্তা, পর্যটক ও বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করছেন অনেক বিদেশি নাগরিক। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকদের জন্য একটি হটলাইনও খোলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে বিদেশি নাগরিকরা ওই নাম্বারে ফোন করে সাহায্য নিতে পারবেন। তাৎক্ষণিক তাদের নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিতে পুলিশের একটি বিশেষ দলকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, জেলায় বিদেশি নাগরিকরা যে যেখানে আছেন, সেখানেই তাদের আবাসস্থলে ও কর্মক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেসব বিদেশি গ্যাস ফিল্ড, কলকারখানা বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে কমর্রত আছেন তাদের চলাচলের সময় তাদেরকে বিশেষ প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় থানাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে বিজিবি।
এ ব্যাপারে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্ণেল সাজ্জাদ হোসেন জানান, সীমান্তে বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে বিজিবি সব সময় প্রস্তুত আছে। এ ছাড়া সীমান্তগুলোতে অতিরিক্ত নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কে কখন আসছে যাচ্ছে তাদের দিকেও আমরা কড়া নজর রাখছি। পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে।
বিজিবি’র পাশাপাশি প্রতিটি সীমান্তে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে।