সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ নগরীর টিলাগড় থেকে নিখোঁজ মায়ের সন্ধান চেয়েছে অবুঝ সন্তানেরা

25

স্টাফ রিপোর্টার :
নিখোঁজ মায়ের সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছে অবুঝ সন্তানেরা। দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি করেও মায়ের কোনো সন্ধান না পেয়ে গতকাল বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সন্তানেরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কদর বানুর পুত্র জয়নাল মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বলা হয়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বিকারগাঁও গ্রামের আব্দুল মান্নাসের স্ত্রী আমার মা কদর বানু প্রায় ১০ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমাদেরকে লালন-পালন করতে গিয়ে মা-বাবার কষ্টের শেষ ছিলনা। এক পর্যায়ে আমাদেরকে নিয়ে বাবা সিলেট শহরের টিলাগড় এলাকার কবিরের কলোনীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে চলে আসেন। বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। মা বিভিন্ন লোকজনের বাসায় জি’য়ের কাজ করতেন। আমাদের আত্মীয় স্বজনের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে এবং সঞ্চয়কৃত কিছু অর্থ দিয়ে বড় ভাই হানিফ মিয়া মধ্যপ্রাচ্য চলে যান। এর ২/৩ বছর পর আমার বড় ভাই আমাকেও সেখানে নিয়ে যান। নগরীর টিলাগড় ভাটাটিকর এলাকার মৃত কুনউর রহমানের পুত্র হাজী আজিজুর রহমান মানিকের বাসায় আমার মা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সেই সুবাধে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মানিক মিয়ার বাসায় তার আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসলে আমার মাকে রান্নাবান্না করার জন্য খবর দিয়ে নেয়া হয়। মানিক মিয়ার আত্মীয় স্বজনদের পাশাপাশি সেখানে কাজের লোকরাও উপস্থিত ছিলো। আমার মা পাক ঘরে অন্যান্য লোকজনের সাথে রান্না-বান্নার কাজ করছিলেন। খাওয়া দাওয়ার পর হঠাৎ করেই মানিক মিয়ার স্ত্রী বাসার তৃতীয় তলায় তার রুমে গিয়ে চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে বাসার সব লোকজন ওই রুমে গিয়ে দেখতে পান রুমের তালা ভাঙ্গা এবং আলমারীও ভাঙ্গা। এ সময় মানিক মিয়ার স্ত্রী বলেন, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। স্বর্ণসহ অনেক মালামাল চুরি হয়ে গেছে। তিনি একজন একজন করে বাসার সকল কাজের লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তল্লাশি চালান। কিন্তু কারো কাছ থেকেই কিছু উদ্ধার করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঘটনার ৩/৪ দিন পর মানিক মিয়াসহ তার কিছু আত্মীয়স্বজন আমার মাকে তাদের ঘরের ভেতর আটকে রেখে সন্দেহের উপর ব্যাপক মারধর করেন। এক পর্যায়ে আমার বাবাকেও খবর দিয়ে নেয়া হয় এবং তার উপরও চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। ২৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই শাহপরাণ থানা পুলিশ আমাদের কলোনীতে এসে আমার মাকে ধরে নিয়ে যায়। ২/৩ দিন পরে আমার বাবাকেও ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার সংবাদ শুনে আমরা আদালতের মাধ্যমে এই বছরের ২২ জানুয়ারি প্রথমে আমার মাকে জামিনে বের করে আনি। জামিনে বের হওয়ার পর আমার মা কবিরের কলোনীতে যান এবং আমার ভাইবোনদেরকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় কলোনীর মহিলারা জানায় ওরা মানিক মিয়ার তত্ববধানে রয়েছে। তার জামিনের বিষয়টি ওই কলোনীর কয়েকজন মহিলা মানিক মিয়াকে জানান। আমার মাকে আমার ভাইবোনেরা দেখতে পায়নি বা উনিও তাদের কাছে যাননি বলে আমরা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। আমার ভাইবোন ছোট ছোট থাকায় তারা কোনো খুঁজ করতে পারেনি। আমরা আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করেও তাকে পাইনি। সম্প্রতি আমি দেশে এসে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। নং ৫৪৮, তারিখ ০৮/১১/২০১৫। মা নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর আমার বাবাও মুক্তি পান। কোনো মতে বিভিন্ন লোকজনের সহযোগিতায় কবিরের কলোনী থেকে আমার ছোট ছোট ভাইবোনদের উদ্ধার করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পূর্ব পর্যন্ত মানিক মিয়ার তত্ত্বাবধানে কলোনীর মালিক কবিরের নিকট আমার ভাইবোনেরা মোটামোটি জিম্মি অবস্থায় ছিলো। আমি বিদেশ থেকে আমার ভাইবোনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। এক পর্যায়ে মানিক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে বলেন, ওরা আমার তত্ত্বাবধানে আছে। তুই কবিরের সাথে যোগাযোগ করে ওদের খাওয়া পড়ার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিছ। আমি বাধ্য হয়ে কবিরের সাথে যোগাযোগ করে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে কবিরের নিকট পাঠাই।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের মাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এ সময় কদর বানুর অন্যান্য সন্তানেরা ও তার স্বামী উপস্থিত ছিলেন।