গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
জাফলংয়ে পাথর কোয়ারির বাসকলে সরকারি রাজস্ব আদায়কে কেন্দ্র করে ইজারাদার ও ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই ময়দর, গোয়াইনঘাট থানার এ এস আই রফিক, ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সুহেল, নিকসন, আতিউল্লাহ, নিরাপত্তা রক্ষী আল আমিন, ট্রাক চালক শ্রমিক সংগঠনের মোঃ মাহিন ও মাইনুদ্দিন বাকীদের জানাযায়নি। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার জাফলং বাসকল এলাকার গুচ্ছগ্রাম নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাফলং পাথর কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথর ও বালু মিশ্রিত পাথর থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য চলতি বছরের ২২ মার্চ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইজারা প্রদান করে। এসময় সরকার কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত ১ টাকা ৯৬ পয়সা হারে রাজস্ব আদায় করা হতো। পরবর্তীতে ২৮ মে ২০১৫ইং তারিখে সরকার কর্তৃক আদায়যোগ্য রাজস্বের হার ১০% বৃদ্ধি করে ১ টাকা ৯৬ পয়সার স্থলে ৪ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করে অফিস আদেশ জারি করা হয়। এরপর থেকে ট্রাক মালিক ও চালক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারের পূর্ব নির্ধারিত রাজস্ব প্রতি ঘনফুট পাথর ও বালু থেকে ১ টাকা ৯৬ পয়সার অতিরিক্ত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলো। ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের পূর্ব নির্ধারিত রাজস্ব বহাল রাখার দাবিতে ইতিপূর্বে তারা একাধিকবার অবরোধ কর্মসূচিও পালন করেছে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার দুপুরে পাথর বোঝাই ট্রাকের চালকরা অতিরিক্ত রাজস্ব দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে ট্রাক শ্রমিকদের বাক-বিতান্ডার সৃষ্টি হয়। যা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ট্রাক চালক সংগঠনের শ্রমিকরা সংগঠিত হয় এবং তামাবিল মহা সড়কে ট্রাক ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে ও বিক্ষোভ করতে থাকে।
ইজারদার বশির মিয়া জানান আমরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে বৈধভাবে ইজারা নিয়েছি। কিন্তু ট্রাক সংগঠনের শ্রমিকরা ইজারা প্রদান করতে অন্যায় ভাবে বাধা সৃষ্টি করছে এবং আমাদের টোল আদায়ের ঘরে হামলা চালিয়ে আমাদের ৪/৫জন লোক আহত করে। ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের জাফলং শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলী জানান আমরা দীর্ঘদিন যাবত ১ টাকা ৯৬ পয়সা হারে রাজস্ব প্রদান করে আসছি। হঠাৎ করে তারা ৪ টাকা ৮০ পয়সা বৃদ্ধি করেছে। আমারা বৃদ্ধিকৃত রয়েলিটি দিতে অনিচ্ছুক। এছাড়া ইজারাদাররা হামলা চালিয়ে আমাদের ১০জন শ্রমিক আহত করে।
এদিকে, জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে উত্তোলিত বালু মিশ্রিত পাথরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সাথে জাফলং ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এডিসি জেনারেল (ভারপ্রাপ্ত) জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সালাহ উদ্দিন, সহকারী কমিশনার ভূমি আশরাফ আহমেদ রাসেল, অফিসার ইনচার্জ গোয়াইনঘাট এম এ হাই, জাফলং পাথর ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ, জাফলং ষ্টোনক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত, সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু, সিলেট জেলা ট্রাক চালক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুস ছালাম, সম্পাদক আব্দুল গফুর, জাফলং শাখার সভাপতি উস্তার মিয়া, সম্পাদক ইয়াছিন আলীসহ পাথর সংশ্লি¬ষ্ট শতাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক।
মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেন জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে উত্তোলিত বালু মিশ্রিত পাথরের রাজস্ব আদায়ে সরকার ও খনিজ মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকার নির্ধারিত ৪ টাকা ৮০ পয়সা হারে সরকারী রাজস্ব পরিশোধ করবে ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিকগণ। এতে জাফলংয়ে অবস্থিত সকল ক্রাশার মালিকদের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত ৪ টাকা ৮০ পয়সা হারে পরিশোধ করতে অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে গতকাল সোমবার জাফলং ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু এক বার্তায় বলেন জাফলংয়ের ষ্টোন ক্রাশার মিল মালিকরা সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করবে। ক্রাশার মিল থেকে পাথর বহনকারী প্রতি ট্রাকে রশিদ প্রদান করবে সেই রশিদ ট্রাক চালকরা স্থানীয় রাজস্ব অফিসে জমা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারবেন। রশিদ অনুযায়ী স্থানীয় রাজস্ব ইজারাদাররা ক্রাশার মিল থেকে টাকা উত্তোলন করবে। ক্রাশার মেশিন মালিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান এই সিদ্ধান্ত যে সকল ক্রাশার মিল কর্তৃপক্ষ অমান্য করবে সেই সব ক্রাশার মিলের কোন সমস্যা হলে জাফলং ষ্টোনক্রাশার মিল মালিক সমিতি তাদের কোন প্রকার সহযোগিতায় সাথে থাকবেনা। তাই সরকারের রাজস্ব আদায়ে সকল ক্রাশার মিল মালিকদের সহযোগিতা করার জন্য বিবৃতিতে তারা অনুরোধ জানান।