শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
আগামী ডিসেম্বরেই সারাদেশের মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করা না হলেও বেশ আগে থেকেই কুলাউড়া পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ডিজিটাল বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুনে পৌর শহরের প্রধান সড়ক, প্রতিটি ওয়ার্ড মহল্লা ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা নিজে এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে প্রার্থী হবার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের এমন সরব তৎপরতায় পৌরসভায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে ২৪৫টি পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে কুলাউড়া পৌরসভাও রয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নতুন করে হিসেব নিকেশ করতে হচ্ছে। এবারের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন সেটি চূড়ান্ত না হলেও সব প্রার্থীই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ ঘরানার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা মাঠের প্রচারণায় রয়েছেন অনেকটাই নীরব। বিএনপি দলীয়ভাবে কোন প্রার্থী দিবে কিনা সেটা এখনো কোন সূত্র নিশ্চিত করেনি। তবে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জমান সজল বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা যায়। এদিকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে তারা দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারবে না।
এবারের কুলাউড়া পৌর মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ছাড়াও কয়েকজন প্রবাসী কমিউনিটি নেতা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন উপজেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি ও বতর্মান পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ, কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক একেএম সফি আহমদ সলমান, জেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ,উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ (মহালদার), উপজেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক সফিউল আলম সফি, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জমান সজল,কুলাউড়া ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন স্কটল্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদ, পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি মুহিবুর রহমান মাস্টার, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন রেনু। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) উপজেলা শাখা তাদের দল থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও উপজলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নেহার বেগম এর মধ্য থেকে একজনকে দলীয় প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রবাসী সম্ভাব্য প্রার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর জনসমাগম স্থলগুলোতে সরগরম আলোচনায় মুখর হয়ে উঠছে। কে কোন দলের প্রার্থী হবেন, কে দলীয় মননোয়ন পাবেন, কে মেয়র হলে কি করবেন এ সকল নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসছে। ঈদ ও পূজোকে উপলক্ষ্য করে তোরণ, ডিজিটাল বিলবোর্ড ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁরা। ভোটারদের মন জয় করতে নানা কৌশলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগাম দোয়া ও আশীর্বাদ নিচ্ছেন। বিভিন্ন সভা, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পৌরসভার উন্নয়নের জন্য তাদের নানা পরিকল্পনার কথা বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। প্রার্থীরা সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের মাধ্যমে কৌশলে চালাচ্ছেন ভোটের জরিপ। ভোটারদের আগাম সমর্থন আদায়ে করছেন উঠান বৈঠক। সেখানে থাকছেন তাদের আত্মীয়স্বজন, সমর্থক ও কর্মীরা। তাদের মতামত নিয়ে ঠিক করা হচ্ছে ভোটের আগাম পরিকল্পনা। বর্তমান মেয়র প্রকাশ্যে প্রচারণা না চালালেও নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ভোটাররাও হিসেব নিকেশ কষতে শুরু করেছেন।
এদিকে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সরব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩ থেকে ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সাথে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। তবে শেষ পরিণতি কি হবে, শেষমেষ কারা থাকবেন কারা থাকবেন না তা সময়ই বলে দেবে।