সংসদে বাজেটের উপর সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ॥ বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা সুইস ব্যাংকে

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম বাজেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই বাজেটে দেশের প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নের গতিধারা ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবই।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা এবং ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করে বলেন, অতীতের সকল সরকারের আমলের বাজেট ছিল বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর। উন্নয়ন বাজেটও ছিল বিদেশনির্ভর। কিন্তু আমরা দক্ষতার সঙ্গে প্রতিবার বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছি বলেই এবারের বাজেটে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আর উন্নয়ন বাজেটও আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এর মাধ্যমে আমাদের আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মমর্যাদাশীলতা প্রমাণ করেছে। প্রতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও আমাদের অন্যতম সাফল্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমৃদ্ধির আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশেরÑ শিরোনামে এবার ৫ লাখ ২৩ লাখ ১৯০ কোটি টাকার সর্ববৃহৎ বাজেট দেয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে সারাদেশেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসাব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে ২০টি দেশ অবদান রাখছে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম।
টানা দুই মেয়াদে দেশের উন্নয়ন-সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানুষের গড় আয়ু ৬৫ থেকে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ থেকে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে ১১ ভাগে নামিয়ে এনেছি, ৪৫ ভাগ দারিদ্র্যকে ২১ ভাগের নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যের হার আগামীতে ১৬/১৭ ভাগে নামিয়ে আনব।
সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে ভার ও দায়মুক্ত করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে শক্ত হাতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন এটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অপরাধ। স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারে, সেই টার্গেট থেকেই জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নিলেও তাঁর আদর্শ কেড়ে নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পথ ধরেই বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন জাতির মর্যাদায় উন্নীত করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আরও বেড়েছে। গত নির্বাচনে এর প্রমাণ হয়েছে। চতুর্থবারের মতো দেশের মানুষের সেবা করার জন্য জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তিনি বলেন, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ- শিরোনামে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতি দেশের মানুষ পূর্ণ আস্থা জানিয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়েই এবারের বাজেটটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণেই দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আমরা ৫ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যখন একটি দেশের প্রবৃদ্ধি উচ্চহারে বৃদ্ধি পায়, মূল্যস্ফীতি নিচে থাকে- সেই অর্থনীতির সুফল দেশের সাধারণ মানুষ ভোগ করে থাকে। এ কারণে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন সমৃদ্ধ, বাজেটের জিডিপির ৫ ভাগ ঘাটতিও সহনীয়।
আগামী ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সংসদ নেতা বলেন, ওই সময়ের মধ্যে মাথা পিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলারে উন্নীত এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের প্রতিটি মানুষ উপকৃত হবে। শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হবে। কওমি মাদ্রাসাকে মূল শিক্ষার ধারায় ফিরে এনেছি। এরাও শিক্ষা শেষে দেশে-বিদেশে চাকরির পাবে। কারণ এরাও এ দেশেরই সন্তান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারুণ্যের শক্তিকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত। বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়াতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। যুব সমাজের উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব অত্যন্ত যুগোপযোগী। প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে শতকরা ২ ভাগ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, এতে প্রবাসীরা তাঁদের কষ্টার্জিত উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, দেশের মোট শ্রম শক্তির বড় অংশই কৃষি খাতে নিয়োজিত। এক দশকে কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি এবং এ খাতে ব্যাপক সাফল্যে এসেছে। ২ কোটি ৮ লাখ কৃষক কৃষিকার্ডের মাধ্যমে কৃষি উপকরণের ভর্তুকি পাচ্ছে। ব্যাপক গবেষণার কারণেই দেশের কৃষি খাতে ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে।
প্রতি গ্রামে শহরের আধুনিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার বর্তমান সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধ পৌঁছে দেয়াই বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। দেশের সকল জনগণকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন দেশের ৯৩ ভাগ জনগণ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
দেশের রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ৩০ বছরের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, মেট্রোরেল নির্মাণ হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে দ্রুত রেল, নৌসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রামে দ্রুতগামীর ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে তাঁর সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিয়েছি। এখন ৪জি চলছে, ৫জি আনার পরিকল্পনা চলছে। আর দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনা খাত তৈরি পোশাক খাতে এক ভাগ প্রণোদনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ওই শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা (সামরিক স্বৈরশাসক) ক্ষমতায় থেকে শুধু নিজেরা দুর্নীতি করেনি, দুর্নীতিকে সমাজে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান বা নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যুগোপযোগী। আর ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। কারণ ব্যাংকে উচ্চহারে সুদ থাকলে শিল্পখাত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হয় না। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা রয়েছে। যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে বর্তমান সরকারের আমলে প্রস্তাবিত এই প্রথম বাজেট অত্যন্ত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম বাজেট। এই বাজেট দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন চায়। দেশের মানুষের কল্যাণ ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবোই ইনশাল্লাহ।
বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা সুইস ব্যাংকে : একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে মনোনয়ন বাণিজ্যটা করেছে সেই টাকাগুলো কোথায় রেখেছে খোঁজ নিলেই সুইচ ব্যাংকের হিসাবটা মিলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বলেছেন টাকা সুইচ ব্যাংকে যাচ্ছে। উনি যাদের (বিএনপি) এত প্রশংসা করেন, যাদের কথা বেশি বলেন তাদের কথাটাই সুইচ ব্যাংকের তালিকায় বেশি এসেছে।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে অর্থবিল-২০১৯ পাসের প্রস্তাব উত্থাপনের পর জনমত যাচাই এর প্রস্তাবের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হওয়ায় তাঁর অনুরোধে এবারই প্রথম অর্থ বিল পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট উত্থাপনের পর প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার আছে। মন্ত্রীরা একমত কি না, বা সংসদ সদস্যরা একমত কি না প্রশ্নের জবাবে বলেন। বাজেট যখন তৈরি হয় তখন সবার মতামতটা নেয়া হয়। বাজেট যখন ক্যাবিনেটে পাস হয়, পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নিয়ে সংসদে আসে। বাজেট যেদিন উপস্থাপন করা হয় বিশেষ ক্যাবিনেট করেই বাজেট উপস্থাপন করা হয়। কাজেই সেখানে মন্ত্রীদের সকলের মতামতটা থাকে। তারপর কথা বলার অধিকার সকলেরই আছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে।
গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে দিতে যেয়ে সংসদ নেতা বলেন, উনি এক লাখ অটোমেশন মেশিন উপহার দেবেন। এটা আমরা গ্রহণ করলাম, উনি উপহার দেবেন। এখানে জনমত যাচাই এর কোনে প্রয়োজন নাই। তিনি যখন উপহার দিতেই চাচ্ছেন, দেশকে দেবেন, তিনি যথেষ্ট সচ্ছল দিতে তিনি পারবেন। দেয়ার মতো ক্ষমতা তাঁর আছে।
খেলাপী ঋণ নিয়ে কতিপয় সংসদ সদস্যের ক্ষোভের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণের সংস্কৃতিটা কখন এসেছে? যখন থেকে এই দেশে সামরিক শাসন এসেছে। এই সামরিক শাসন কিভাবে এসেছে জাতির পিতার নির্মমভাবে হত্যা করে সেনা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সামরিক শাসক ক্ষমতা দখল করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর যখন দল গঠন করতে গেল তখন দল গঠন করতে গিয়ে কিছু লোককে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে এই ব্যাংক থেকে অকাতরে ঋণ নেয়া এবং ঋণ পরিশোধ করার সংস্কৃতিটা সৃষ্টি। এটা ব্যাংকের ইতিহাস।
তিনি বলেন, জেনারেল জিয়া যখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তখন থেকেই খেলাপী ঋণের সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে বের করে আনা অত্যন্ত কষ্টকর। তারপরেও যখন মাঝে মাঝে ইমার্জেন্সি সরকার ক্ষমতায় আসল তখন ব্যবসায়ীর কেউ জেলে, কেউ দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যায়Ñ কেউবা ব্যবসা চালাতে পারছে না। তখন একটা খেলাপী ঋণ হয়ে গেল। ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকলে তখন কিন্তু খেলাপী ঋণের সংস্কৃতি চলে যেতে বাধ্য। ঋণখেলাপী দূর করতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, নিয়ে যাচ্ছি।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় মানুষের অপ্রত্যাশিত কিছু অর্থ আসে। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত অর্থটা কোন কাজে লাগানো যায় না। তাদের যদি একটা সুযোগ দেয়া হয়, যেন এই টাকাটা মূল ধারায় চলে আসে এবং সেটা জনগণের কাজে দেবে। কোথায় গুঁজে রাখবে বা বিদেশে পাচার করছে সেটাও একটু খতিয়ে দেখা দরকার। সেজন্য সুযোগটা দেয়া হচ্ছে। তবে যদি দেখি সেখানে দুর্নীতি বাড়ছে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এবং সেটার সুযোগ আছে। দুর্নীতিটা কখনও প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, সুইস ব্যাংকের টাকায় কাদের নামের তালিকা এসেছে, উনি যেন একটু ভাল করে দেখেন। যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন, যাদের কথা এত বেশি বলেন, তাদের কথাটিই বেশি এসেছে। এমনও তথ্য এসেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন যারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৬৯২ জন মনোনয়ন পেল, একটা আসনের বিপরীতে ৩ জনের অধিক বা দুই জনের অধিক মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের যে বাণিজ্যটা করা হলো, মনোনয়ন বাণিজ্যের সেই টাকাগুলো তারা (বিএনপি) কোথায় রাখল? এই খোঁজটা করলেই সুইচ ব্যাংকের হিসাবটা পেয়ে যাবেন। আর বাংলাদেশ যদি কল্যাণ রাষ্ট্রই না হবে, দারিদ্র্যমুক্ত না হবে, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা না পৌঁছায়Ñ তবে দেশের এত উন্নয়ন-অগ্রগতি হলো কীভাবে?
লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের নাম না নিলেও তার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ বসে নানারকম চক্রান্ত করছে। তাদের চক্রান্ত থেকে দেশটা রক্ষা করব কিভাবে? যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, যারা মানিলন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, যারা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এদের (তারেক রহমান) ব্যাপারে আরও কি করা যায় সেটাই আমাদের ভাবতে হবে।