কাজিরবাজার ডেস্ক :
হরতাল-অবরোধের নামে সহিংসতায় জড়িতদের ধরতে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা চালু রাখার পাশাপাশি দ্রুত অপরাধীদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।
গতকাল সোমবার(২৭ এপ্রিল’২০১৫) সাতক্ষীরা ও বগুড়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালে এ নির্দেশ দেন তিনি।
সহিংসতার মামলাগুলোর যেন দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হয় এমন অনুরোধও করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও সিরাজগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
মন্ত্রি পরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা’র পরিচালনায় ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ এসব জেলার জেলা প্রশাসকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।
মন্ত্রি পরিষদের বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কক্ষে এ ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের জীবন নিরাপদ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই যৌথ অভিযান চালু রাখতে হবে।’
সহিংসতায় জড়িতদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটা জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের যারা সকলকে আমি অনুরোধ করবো মামলাগুলোর যেন দ্রুত চার্জশিট হয়, দ্রুত সম্পন্ন হয় ‘
‘এটা না হলে; শুধু মামলা করলে ২দিন পর জামিনে বের হয়ে আবার এসে ওই একই কাজ করবে। সেটা যাতে না করতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। আর মোবাইল কোর্ট এটাও কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, মানুষকে ক্ষতি করেছে, মানুষের ওপর আঘাত করেছে, জীবন্ত মানুষগুলোকে যারা এভাবে দগ্ধ করেছে, এদের শাস্তি পেতেই হবে।’
ভবিষ্যতে কেউ যেন সন্ত্রাস এবং নাশকতা করার সাহস না পায়, প্রশাসনকে সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালে যে সকল ঘটনাগুলো ঘটেছিলো। এরপর যখন ইলেকশন হয়ে গেলো। সত্যি কথা বলতে কি আমরা উন্নয়নের দিকে এত বেশি মনোযোগ দিলাম যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরো বেশি ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে তেমন একটা মনোযোগ দিতে পারিনি। যার খেসারতটা দিতে হলো এই ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে। এ সময় দেখলাম এক টানা হরতাল-অবরোধ দেয়া, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা।’
ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসকসহ জেলা কর্মকর্তারা তাদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এবং তা সমাধানের প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সমস্যা সমাধানে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন।
এ সরকারের মাত্র ৩ বছর ৮ মাস সময় আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন।তিনি বলেন, আমরা যেসব উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে সেগুলো সময় মতো শেষ করতে হবে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যুবকদের স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উৎসাহ দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবন জীবিকার জন্য আমরা অনেক কিছু করছি। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং দিচ্ছি। ভোকেশনাল ট্রেনিং এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
কৃষকদের সার, বীজ প্রদানের পাশাপাশি কৃষির আধুনিকায়নের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, মানুষ আয় বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় তিনি স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণ, বাজারজাতকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও খাদ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্কুল কলেজের মাঠের বাইরে আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন।
মানুষের শিক্ষার অধিকার ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আর দেশকে সেভাবে গড়তেই এ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।