স্টাফ রিপোর্টার :
ভূমিকম্পে স্কলার্স হোম পাঠানটুলা ক্যাম্পাসে ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ একদিনের জন্য স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের সময় পুরো সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূকম্পন কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। গতকালকে ৫.৩ মাত্রার এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে স্কালার্সহোস পাঠানটুলা ক্যাম্পাসের ১১ তলা ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ক্লাস রুমের দেয়ালে ফাটল দেখতে পায়। আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানায়। তখন অভিভাবকরা আতংকিত হয়ে ক্যাম্পাসে ছুঁটে আসেন। ওই সময় স্কুলের একটি ক্লাসের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্ততি চলছিল। এক পর্যায়ে অভিভাবকরা স্কুল ভবনে ফাটল ও উদ্ভবত পরিস্থিতিতে স্কুলের অধ্যক্ষ ড.কবির চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তাদের জানানো হয় তিনি ক্যাম্পাসে নেই। তবে একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী অভিযোগ করছেন কবির চৌধুরী ওই সময় ক্যাম্পাসেরই একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। অভিভাবকদের অভিযোগ এর আগের দিনের ভূমিকম্পে স্কুলের একটি শ্রেণী কক্ষের ফ্যান ছুটে পড়ে যায়। শুধু তাই নয় যে ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে ওই ভবনের কিছু ইট-ছুরকি এক শিক্ষার্থীর ওপরও পড়ে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ কৌশলে পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অভিভাবকদের অভিযোগ শুধু তাই নয় আগের দিনের ভূমিকম্পে বিভিন্ন শ্রেণী কক্ষের মিসরা শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষে ভূমিকম্পের সময় নিজেরা বাহিরে ছুটে আসেন। এ সময় গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক দেখা দেয়। তারা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। গতকাল অভিবাবকরা তাৎক্ষণিক স্কুল ছুটির দাবী, যে ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে ওই ভবন এবং যে শ্রেণী কক্ষে ফ্যান ছুটে পড়েছে ওই ভবন দেখতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেন। এক পর্যায়ে অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলের সামনেই নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে কর্র্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক (গতকাল) স্কুল ছুটি ঘোষণা করে আজ অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করার ঘোষণা দেন। কিন্তু অভিভাবকরা দাবী জানান, কোন মিটিংয়ের দরকার নেই। আগে ওই ফাটলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হউক এরপর মিটিং করার প্রয়োজন হলে করা যেতে পারে। এক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে আজ স্কুল ছুটি ঘোষণা করে পরবর্তিতে ক্লাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে অভিভাবকরা শান্ত হন।
ভবনটির নির্মাণ প্রকৌশলী আলী এন্ড এসোসিয়েটস এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহা. মাতাসিন আলী জানান, ভবনটির পার্টিশন ওয়ালে আগেও ফাটল ছিল। তার এ ফাটল মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভূমিকম্পে ভবনটিতে কোন ফাটল দেখা দেয়নি বলে দাবি করেন তিনি। ভবনে ফাটলের খবর পেয়ে বেলা ৩টার দিকে ভবনটি পরিদর্শনে আসে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী টিম। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে চীফ ইঞ্জিনিয়ার নূর আজিজুর রহমান জানান, কি কারণে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে তারা পরীক্ষা করছেন। এর বাইরে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. কবির চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। এরই মধ্যে প্রকৌশলীরা ভবন পরিদর্শনে এসেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি জানান, বর্তমানে তিনি ঢাকায় রয়েছেন। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।