তামিম-মুশফিকেই ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

30

স্পোর্টস ডেস্ক :
অনবদ্য ইতিহাস। রচয়িতা সেই দু’জনই। যে দু’জন ১৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল আর নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিমের ব্যাট চড়ে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ ইতিহাস রচিত হয়েছে। ১৯৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় কোনো দলের বিরুদ্ধে এ অর্জন টাইগার টিমের।
গতকাল রবিবারের (১৯ এপ্রিল) এ ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। এখন নিশ্চিতভাবেই লক্ষ্য পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’।
ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র ২৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। ২৪০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে তামিমের দুরন্ত সেঞ্চুরি আর মুশফিকের অনবদ্য অর্ধশতকে ভর করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ডে নাইট এ ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি দলপতি আজহার আলী। বড় রান তোলার স্বপ্নে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেও তা দুমড়ে-মুচড়ে দেন টাইগার বোলাররা। মাত্র ৭৭ রানেই পাকিস্তানিদের টপঅর্ডার তছনছ করে পাঁচ উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশি বোলাররা।
এই মুহূর্তে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কায় ভুগতে থাকা পাকিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম। এই দু’জনের জুটিতে ওঠে ৭৭ রান। তবে হারিস সোহেল ফেরত গেলে ফের দু’শ রানেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে সফরকারী শিবির। শেষ পর্যন্ত সাদ নাসিমের সঙ্গেই ওয়াহাব রিয়াজের ৮৫ রানের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটিতে ২৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তান।
সফরকারীদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৭* রান করেন সাদ, আর ৫১ রান করেন ওয়াহাব রিয়াজ। এছাড়া, অধিনায়ক আজহার আলী ও হারিস সোহেলের ব্যাট থেকে আসে যথাক্রমে ৩৬ ও ৪৪ রান।
টাইগার বোলারদের মধ্যে দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। আর একটি করে উইকেট ভাগাভাগি করেন নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মুর্তজা, আরাফাত সানি, রুবেল হোসেন ও নাসির হোসেন। এরমধ্যে রুবেল দু’টি ওভারে কোনো রানই দেননি, একটি ওভারে রান দেননি তাসকিনও।
২৪০ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব ভালো না হলেও সে আক্ষেপ কখনোই বুঝতে দেননি ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ২২ রানের মাথায় সৌম্যকে হারানোর পর রিয়াদের সঙ্গে তিনি গড়ে তোলেন ৭৮ রানের পার্টনারশিপ। রিয়াদের বিদায়ে আগের ম্যাচের জয়ের যৌথ-নায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে গড়ে তোলেন ম্যাচ জয় নিশ্চিত করা ১১৮ রানের জুটি।
এ দু’জনের দারুণ ব্যাটিংয়ের মধ্যে তামিম টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির মাইফলক ছুঁয়ে ফেললে মুশফিকও বেধড়ক পিটুনি শুরু করেন। সেসময় মনে হচ্ছিল পাকিস্তানের যদি আর কিছু রান করতো! তাহলে মুশফিকও তামিমের মতো…! তবে, ৭০ বলে ৬৫ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে মুশফিক পাক বোলার রাহাত আলীর দারুণ একটি বলে বিদায় নেন। অবশ্য মুশফিক আউট হলে তুমুল করতালি দিয়েই তাকে প্যাভিলিয়নের পথে শুভেচ্ছা জানান সমর্থকরা।
এরপর আর কোনো হোঁচট খেতে হয়নি বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নিরাপদে দলকে ইতিহাস জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তামিম ইকবাল। সাত উইকেটের এ জয় বাংলাদেশ নিশ্চিত করে ৭১ বল হাতে রেখেই।
ঐতিহাসিক এ সিরিজ জয়ের ম্যাচে তামিম অপরাজিত থাকেন ১১৬ রান করে। আর ১৭ রান করে সংগ্রহ করেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদ্ল্লুাহ রিয়াদ।
পাকিস্তানের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন সাঈদ আজমল, রাহাত আলী ও জুনায়েদ খান।
টানা দ্বিতীয় অনবদ্য শতকের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন তামিম ইকবাল।