৫ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে

64

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ৫ জানুয়ারি শনিবার নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন গেজেট জারি করবে। তিন জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে প্রস্তুত হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ লক্ষ্যে সোমবার তারা প্রস্তুতি শুরু করেছে। এবারও মন্ত্রিসভার আকার বর্তমান (৫২) আকারের মতো হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গেজেট জারি এবং সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তথা আওয়ামী লীগকে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুরোধ করবেন। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণের পর প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর তালিকা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পাঠ করাবেন। এর পর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের ধাপে ধাপে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি। এরপরই দফতর বণ্টন করে আদেশ জারি করা হবে। মূলত মন্ত্রিসভা গঠনের দাফতরিক কাজগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করে থাকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবার যা হয় এবারও তাই হবে। এরপরও প্রস্তুতির বিষয় তো আছেই। সেটা শুরু হয়েছে। যখন নতুনরা শপথ নেবেন তখন ‘অটোমেটিক্যালি’ এ মন্ত্রিসভা থাকবে না।
বিগত রবিবার ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনের ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ২৮৮ আসনে (আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, জাসদ ২, বিকল্পধারা ২, তরিকত ফেডারেশন ১, জেপি ১) বেসরকারীভাবে জয়ী হয়েছে। বিএনপি জোট অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি (বিএনপি ৫, গণফোরাম ২) আসন। স্বতন্ত্রসহ অন্যরা জয় পেয়েছেন তিনটি আসনে।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছে এটা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন তাদেরই জায়গা হবে নতুন মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সঙ্গে নতুন সদস্যদের জন্য গাড়িও প্রস্তুত রাখবে সরকারী যানবাহন অধিদফতর (পরিবহন পুল)। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই টানা তৃতীয়বারের মতো এবং স্বাধীনতার পর চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। এখন উৎসুক সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, পুরনোদের মধ্যে কারা থাকছেন, আবার নতুন করেই বা কারা আসছেন, কে পাচ্ছেন কোন দফতর- এমন নানা প্রশ্ন।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দাফতরিক কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কতগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা।
দু’একদিনের মধ্যেই নির্বাচিত এমপিদের গেজেট জারি করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর স্পীকার তাদের শপথ পড়াবেন। মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী এমপিদের গেজেট হওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি চাইবেন। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে দশভাগের ৯ ভাগ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হবে রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন বলেও সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে।