কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনীতি করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাস্তায় নামলে তার কাছে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার জবাব চাইতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে কারা দেশের কল্যাণ চায়, আর কারা চায় না এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেলের কয়েকটি উন্নয়ন কাজ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি মানুষকে বলবো আবার যখন খালেদা জিয়া ঘর থেকে বেরোবেন, রাস্তায় নামবেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করবেন- ‘মানুষ হত্যা করে তিনি কী পেলেন?’
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত লাকসাম-চিন্কি আস্তানা ডাবল লাইনে ট্রেস সার্ভিস ও চট্টগ্রাম স্টেশন ইৠাড রিমডেলিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ ডাবল রেল লাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান রেল লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ সময় লাকসাম রেলওয়ে জংশনে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, কুমিল্লা-৯ আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক ওমর ফারুক, জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাসানুজ্জামান কল্লোল ও পুলিশ সুপার (এসপি) টুটুল চক্রবর্তী প্রমুখ।
৩ মাসে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সহিংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সময়টা দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গেছে সবার। সে দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে। এখন আবার উন্নয়ন অব্যহত থাকবে।
তিনি বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই। যাদের মনুষ্যত্ব নেই তাদের কাছে উন্নয়ন আশা করা ঠিক নয়। কারা দেশের কল্যাণ চায় আর কারা তা চায় না এ বিষয়ে আমি সবাইকে সচেতন হওয়ার কথা বলবো।
আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে কী পেয়েছেন? খালেদা জিয়ার কাছে এ প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত না করে তিনি নাকি ঘরে ফিরবেন না। বাসা ছেড়ে ৬৫ জন মানুষ নিয়ে একটা অফিসে ৯২ দিন বসে থাকলেন। কী করতে পারলেন তিনি। তিনি শুধু মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে আদালতে হাজির হতে হলো। তারপর ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে ঘরে ফিরলেন। তিনি নাকি ঘরে ফিরবেন না। এখন তো ঘরে ফিরে গেলেন।
বিএনপি জোটের টানা ৯২ দিনের হরতাল-অবরোধের সহিংসতাকে বীভৎস কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম বীভৎস কর্মকাণ্ড কখনো দেখিনি। তারা ক্ষমতায় থাকতেও মানুষ হত্যা করে। আবার ক্ষমতা বাইরে থাকতেও মানুষ মারে।
বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মানেই ধ্বংস, বিএনপি মানেই উৎপীড়ন, জাতির জন্য যন্ত্রণা।
বিএনপি দেশকে পিছিয়ে নেয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, কোন সরকার দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যায় এটা কখনো শুনিনি। শুনেছি ভূত নাকি পেছনের দিকে হাঁটে। ক্ষমতায় এলে বিএনপি দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। দেশের উন্নয়নে তাদের নিজেদের আইডিয়া নাই। কিন্তু আমরা যে কাজগুলো রেখে গেছি অন্তত সেটি তো চলমান রাখতে পারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা দেশের উন্নয়ন করি, তারা দেশের সম্পদ ধ্বংস করে। আমরা খাদ্য-বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাড়াই, তারা এসে কমিয়ে দেয়।
রেল ও নৌপথের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে রেল অবহেলিত ছিল। আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে রেলের উন্নয়নে কাজ শুরু করি। মাঝখানে উন্নয়ন আবার বন্ধ ছিলো। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে নব উদ্যমে আবারও রেলের উন্নয়নে কাজ শুরু করি।
সারা দেশে রেল সেবা সম্প্রসারণে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বৃহত্তর লক্ষ্য আছে আগামীতে বরিশালেও রেল লাইন নিয়ে যাবো। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের সংযোগ প্রদানসহ পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলাকে রেল নেটওর্য়াকের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
২০০৯ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনসহ মোট ৯২টি ট্রেন চালু ও ২৪টি ট্রেনের সার্ভিস বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন তিনি।
রেলওয়ের উন্নয়নে সরকারের ২০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যানের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সারা দেশে নতুন রেলপথ নির্মাণ, মিটার গেজকে ব্রড গেজ এবং সিঙ্গেল গেজকে ডুয়েল গেজ রেল লাইনে রূপান্তরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে রেলের ক্ষয়ক্ষতিরও কড়া সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
বাধা দিয়ে কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ।