কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের আগামী পথ চলার প্রেরণা। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে বসবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছেন।
গতকাল রবিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। এখনো জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চলছে। এখনো মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।’
‘যে শক্তি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, মানুষের অধিকার পদদলিত করতে চায়, সে শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। আর সেই সংগ্রামে ৭ই মার্চের এ ভাষণ আমাদের প্রেরণা ও শক্তি হয়ে থাকবে।’
আগামী দিনের নেতৃত্বের জন্যও এই ভাষণ হবে প্রেরণাদায়ী, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
৭ই মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ ভাষণ যখন বঙ্গবন্ধু দিতে যাবেন তখন অনেকে অনেক কিছু বলেছেন। অনেকেই অনেক পরামর্শ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিন তাকে সঠিক পরামর্শটি দিয়েছিলেন আমার মা।
মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকাশ্য রাজনীতিতে কখনোই না এলেও তিনিই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা তাকে ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে একটি কথাই বলেছিলেন, তিনি যেনো তার নিজের মনে যা আছে তাই ওই ভাষণে বলেন।
তিনি বলেছিলেন, গোটা দেশ তার এই ভাষণের দিকে তাকিয়ে, অতএব তাকে সে কথাই বলতে হবে যা বাঙালি জাতি চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আর সে কথা মেনেই বঙ্গবন্ধু ওই ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথাই বলেননি, বলেছিলেন এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও।
‘এ ভাষণের শেষ ওই দুটি লাইন ইতিহাস হয়ে আছে’, বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, ১৯৭৫ এর পর ওই ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়। তিনি বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের। পুরো ২১ বছর এই ভাষণ প্রচারে বার বার বাধা এসেছে।’
‘তবে এসব বাধায়ও এই ভাষণের মর্যাদা শেষ হয়ে যায়নি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাষণের আবেদন এখনও রয়েছে। ৪৩ বছর পরও যখন আমরা এ ভাষণ শুনি তখনও আমরা উজ্জীবিত হই। আমাদের সংগ্রাম তো শেষ হয়নি। আমাদের এগিয়ে যাওয়া, আমাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এই ভাষণ থেকে এখনও আমরা পাই।
‘এই ভাষণ আমাদের জন্য সর্বকালের প্রেরণা,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত এ সেমিনারে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও জীবনকর্ম নিয়ে দুটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়। যার একটি হলো- বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’। অন্যটি বইটি হলো- ‘পয়েট অব পলিটিক্স’।
১২টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম নিয়ে এ বই দুটি প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।
সেমিনারে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আলোচনা করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ও কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. শাহিনুর রহমান।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ।