বালাগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন সম্পদের অপব্যবহার রোধ করতে পারলে দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হত। মন্ত্রী বলেন দেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতি আর হরতাল-অবরোধের কারণে দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দেড় হাজার কোটি ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উচ্চ কন্ঠে কথা বলতে পারবে তা কেউ কখনও কল্পনা করতে পারেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন শুধুমাত্র বিদেশের আশা না করে সরকারী উদ্যোগে পদ্ধা সেতু কাজ শুরু করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বালাগঞ্জ উপজেলার ওসমানীনগর থানার উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর নছিব উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের উদ্যোগে বৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এডুকেশন ট্রাষ্টের উদ্যোগে এ বছর শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলার মধ্য থেকে ৪টি কলেজ ৩৩টি মাধ্যমিক স্কুল ও সমমান ১২টি মাদ্রসা মিলিয়ে মোট ৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১শ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ হাজার টাকা করে বৃত্তি বিতরণ করা হয়। বৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি বদরুল ইসলাম। দেশের সার্বিক উন্নতি করতে হলে দেশ ও মানুষের স্বার্থে গণমুখী রাজনীতি করা প্রয়োজন উল্লেখ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আরও বলেন পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি পরিহার করলে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করা সম্ভব হবে। বিএনপি তথা বিশ দলীয় জোটকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন আপনারা যে পথে হাঁটছেন সেটা কোন সঠিক পথ হতে পারে না। বিগত সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন একটি জোট নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বয়কট করল। ঐ জোটের নেতা কর্মীরা এখন আবার নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর ষড়যন্ত্রে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা হরতাল-অবরোধ দিয়ে আর রাস্তা ঘাটে যানবাহনে বোমা মেরে মানুষ মেরে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন প্রবাসীরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এই প্রবাসীরা দেশের যে কোন ক্রান্তি লগ্নে তাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর সহ গোটা সিলেট অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন এ ক্ষেত্রে প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্ট প্রসংসার দাবী রাখে। প্রবাসীরা শরীরে ঘাম জরিয়ে অর্থ উপার্জন করে তাদের পরিবার পরিজন সহ দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটান। মন্ত্রী তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন “দেশে কোন বেকার নেই”। তবে এর যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ প্রবাসে রয়েছে কিংবা চাকরী-বাকরী করছে। ট্রাস্টের সেক্রেটারী হারুন অর রশিদ হারুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সিলেট-২আসনের এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমপি এহিয়া বলেন বর্তমান সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে এরই ফলশ্র“তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর উন্নয়নে যথাযথ বরাদ্দ দিচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন সারা দেশের ন্যায় সিলেট সহ বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কারীগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হবে। তিনি আরনও বলেন প্রধান মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে একটি করে কলেজ এবং একটি করে মাধ্যমিক স্কুল সরকারী করণ করা হবে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর, বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুর রহমান, এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সেক্রেটারী ও বৃত্তি বিতরণ আয়োজক কমিটির আহবায়ক হারুনুর রশিদ চৌধুরী, বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলা আদর্শ সমিতি ইউকের সভাপতি নুরুল হক নুর আলী, উমরপুর ইউপির চেয়ারম্যান ট্রাস্টি ফারুক আহমদ তালুকদার, গোয়ালা বাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মুকিত, খাদিমপুর নছিব উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সারেয়ার, চান্দাইরপাড়া সুন্নিয়া হাফিজিয়া আলিম মাদ্রসার অধ্যক্ষ সরওয়ার জাহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শাহ্ আজিজুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, গোয়ালা বাজার ইউপির চেয়ারম্যান ট্রাষ্টি আতাউর রহমান মানিক, ট্রাষ্টের সহ-সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আয়াছ, অর্থ সম্পাদক এম এ কাহার লিটন, কার্যকরী সদস্য গোলাম কিবরিয়া, ট্রাস্টি সৈয়দ আকামত আলী রুবেল, আব্দুল কুদ্দুছ শেখ, নুরুল হক জিতু, বাবুল খান, ফারুক আহমদ, আফজাল আহমদ, হাজী ধলা মিয়া, তুরন মিয়া, চুনু চৌধুরী, আব্দুল মছব্বীর, ইলিয়াছ আহমদ, সমাজ সেবক সায়মন আলী সহ এডুকেশন ট্রাস্টের প্রায় শধতাধিক ট্রাস্টি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এদিকে বিশ্বনাথ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : জাতীয় পার্টি (জেপি) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, দেশের সকল পর্যায়ের জনগণ আন্দোলন করতে জানেন। আমরাও আন্দোলন করেছি, কিন্তু দেশের সম্পদ পুড়িয়ে এভাবে আন্দোলন করিনি। পেট্রোল বোমায় যারা দেশের সম্পদ পুড়িয়েছে জাতিকে তাদের চিনে রাখতে হবে।
সিলেটকে দেশের জন্য গৌরব দাবি করে সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে সিলেটবাসীর অনন্য অবদান রয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, এএসএম কিবরিয়া ও আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেটের গৌরব। কাজেই সিলেটের উন্নয়ন দেখে দেশের উন্নয়ন আঁচ করা যায়। কেননা ৩০ বছর আগের সিলেট আজ অনেকটাই উন্নত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশীরা যেভাবে উৎকন্ঠায় রয়েছেন দেশের জনসাধারণও তেমনি আতঙ্কে রয়েছেন। এ পরিস্থিতি আর বেশিদিন নয়, অবরোধ চলছে, হরতাল চলছে পাশাপাশি যানবাহনসহ কলকারখানাও চলছে। ফলে উৎকন্ঠা ও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই, অচিরেই দেশ স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে। মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা উত্তরের রাজনীতি এক হওয়া ঠিক নয়, এক্ষেত্রে রাজনীতিতে সহনশীলতা প্রয়োজন। গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় বিশ্বনাথের দেওকলস দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভা শেষে ভাটিখাল পুন:খনন কাজের উদ্বোধন ও প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গোদাম ঘাট-গাজীর মোকাম রাস্তার উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন তিনি।
দেওকলস হাইস্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ফখরুল আহমদ মতছিনের সভাপতিত্বে ও অধ্যক্ষ আব্দুল মুকিতের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন, শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় পার্টি (জাপা) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বন এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, যুগ্ম-সম্পাদক (জেপি) ইফতেখার হোসেন লিমন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একান্ত সচিব অমল চন্দ্র দাস, সিলেট জেলা জাপা নেতা আবুল কাশেম মন্টু, বিশ্বনাথের ইউএনও আসাদুল হক, বালাগঞ্জের ইউএনও আশরাফুর রহমান, উপজেলা প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দীক।