স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমায় গত দু’মাসে আইন শৃংখলার চরম অবনতি হয়েছে। বাসা-বাড়িতে ঘন ঘন চুরি-ডাকাতির বেড়ে গেছে। চলমান হরতাল-অবরোধের ডিউটির কারণে পুলিশের নিয়মিত টহল না থাকায় এ সব চুরি-ডাকাতি বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
থানা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার শীতে (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৪) দক্ষিণ সুরমায় সবচেয়ে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে এসএমপির ৬ থানায় দুমাসে ১৭ টি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে চলমান হরতাল-অবরোধ আসার পর রাতে নাশকতার ঘটনা বেড়ে যাওযায় ডাকাতি কিছু কমে আসে। ডাকাত চোর চক্র রাতে জামায়াত-শিবিরের নাশকতা তৎপরতার কারণে আত্মগোপনে চলে যায়।
থানার পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি মাসে আবার চুরি-ডাকাতি বাড়তে থাকে। কারণ, ওই সময়ে পুলিশ সড়কে নাশকতা ঠেকাতে ও বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের সামলাতে ব্যস্ত থাকে। ওই সুযোগ নেয় চোর-ডাকাত দল।
চুরি-ডাকাতি বাড়লেও পুলিশ তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ওই সব ঘটনার মামলার তদন্তও ঝুলে আছে। উদ্ধার হচ্ছে না চোরাই বা লুট হওয়া মালামাল।
অভিযোগ রয়েছে, ডাকাতির ঘটনা ঘটার পর ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ ডাকাতির ধারায় মামলা না করে চুরির ধারায় মামলা নিচ্ছে।
মামলার নথি থেকে দেখা গেছে, জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি মাসে এসএমপির দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ৯টি চুরি-ডাকাতির মামলা হয়েছে। বাস্তবে, চুরি-ডাকাতির ঘটনা আরও বেশি বলে স্থানীয়দের অভিমত। নানা হয়রানির কারণে অনেকে মামলা করা থেকে বিরত থাকেন। দক্ষিণ সুরমার লাউয়াইয়ের গোলাম হাদি সয়ফুল বলেন, পুলিশ হরতাল ডিউটিতে ব্যস্ত। আর অন্যদিকে বাসা-বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে। মামলা করার পর এখনো লুট হওয়া মালের হদিস মেলেনি।’
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, গত ২২ ফেব্র“য়ারি দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়ায় তামিম আহমদের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও আসামী আটক নেই, মালামালও উদ্ধার হয়নি। গত ১৫ ফেব্র“য়ারি মোগলাবাজারের সুলতানপুরের জয়ন্তকুমারের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু পুলিশ এখনো মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। ৯ ফেব্র“য়ারি রাতে লাউয়াইয়ের রফিকুল ইসলামের বাড়িতে চুরি হয়। চোরেরা ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার মাল নিয়ে যায়। কোনো মাল উদ্ধার নেই। ৭ ফেব্র“য়ারি মোগলাবাজারের সোনাপুর এলাকার আতিক মিয়ার বাড়ি থেকে দেড় লাখ টাকার গরু চুরি হয়। উদ্ধার নেই। গত ৩ ফেব্র“য়ারি রাতে দক্ষিণ সুরমার গোলাম হাদি সয়ফুলের বাড়িতে ১৭-১৮ জনের ডাকাত হানা দেয়। প্রবাসীর ওই বাড়ি থেকে ২৪ লাখ ২২ হাজার টাকার মাল লুট করে। কিন্তু মাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গত ২৭ জানুয়ারি ভার্থখলার আবদুল মান্নান দুলালের বাসায় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মাল চুরি হয়। ১৩ জানুয়ারি মোগলাবাজারের ছিচরাকান্দি এলাকার আনু মিয়ার বাড়ির গোয়লঘরে গরু চুরি করে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা। এই অগ্নিসংযোগ মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। ১০ জানুয়ারি সোনারগাঁ আবাসিক এলাকার ইন্টারশ্যানাল স্কুলের প্রায় এক লাখ টাকার মাল চুরি হয়। গত ৬ জানুয়ারি রাতে শিববাড়ি পাঠানপাড়া থেকে আফজল আহমদের বাড়ির গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়। উদ্ধার নেই।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ বলেন, হরতালের কারণে পুলিশের ওপর চাপ যাচ্ছে। যে কারণে নিয়মিত টহল দিতে পারছে না পুলিশ। তবুও এসব ঘটনার তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’