কুমিল্লায় বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া ॥ ক্ষমতা ছাড়লে আওয়ামীলীগকে জনগণ পিষে ফেলবে

35

BC-29-11-14-N_37কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্ষমতা ছাড়লে জনগণ আওয়ামী লীগকে পিষে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া।
গতকাল শনিবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল ময়দানে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, মাঠে-ঘাটে এখন লাশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের ইতিহাসে এতো লাশ আগে কখনো পাওয়া যায়নি। লাশ পাওয়ার এমন ঘটনা স্বাধীনতার সময় হয়েছিল। এখন খুনিরা এক হয়েছে। এক খুনির সঙ্গে যোগ হয়েছেন আরেক খুনি এরশাদ। তিনি জিয়াকে খুন করেছেন। নুর হোসেনকে খুন করেছেন। তারা এ খুন-গুম-অপহরণ করে চলেছে এ কারণে যে- তারা জানে ক্ষমতা ছাড়লে জনগণ তাদের ছাড়বে না, পিষে ফেলবে, পিষে ফেলবে। কিছু রাখবে না।
বিএনপি প্রধান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযুক্ত করে বলেন, পুলিশকেও আইন মেনে চলতে হবে। তারা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তারাও গুম করে চলেছে। গড়ে প্রতি মাসে একশ’ পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি সব পুলিশের কথা বলছি না। একটি বিশেষ জেলার পুলিশ মনে করে, আমরা যত অপরাধ করি না কেন সব অপরাধ মাফ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, আপনাদের যেমন ছেলে-মেয়ে-ভাই আছে, যাকে খুন-গুম করছেন তারও ছেলে-মেয়ে-ভাই আছে। পুলিশকে বলবো, আপনারা জনগণের সেবক। জনগণের ওপর অত্যাচার করবেন না। আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আইন মেনে কাজ করুন।
এ সময় গোয়েন্দা বাহিনী ডিবিকে কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের জন্যও অভিযুক্ত করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ডিবি কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে, টাকা দিলে ছেড়ে দিচ্ছে, নইলে খুন করছে।
সারা বিশ্বে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব বাতিলের দাবি উঠেছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় থাকতে এই র‌্যাব সন্ত্রাসী-জঙ্গি গ্রেফতার করেছে। দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেই র‌্যাব এখন খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসানকে না ধরা পর্যন্ত গুপ্ত হত্যা বন্ধ হবে না।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবী আজ দাবি করেছে অবিলম্বে র‌্যাব বাতিল করতে হবে। র‌্যাব এখন মানুষ গুম-খুন করার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। যত দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে তারাও একই দাবি জানিয়েছে। র‌্যাবকে আর জনগণের ক্ষতি করতে দেওয়া যায় না না।
যেসব বাহিনী মানুষ হত্যা-গুম-অপহরণে জড়িত তাদের কেনো প্রশিক্ষণ না দিতে বিদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে খালেদা বলেন, যারা মানুষ খুন করছে, গুম করছে, তাদের বিদেশে নেওয়া বন্ধ করুন। এদের প্রশিক্ষণ দেবেন না, টিয়ার গ্যাস দেবেন না, সরঞ্জামাদি দেবেন না।
বিএনপি প্রধান বলেন, আজ তারা গণতন্ত্র-উন্নয়নের কথা বলে। আসলে কোথাও গণতন্ত্রও নেই, উন্নয়নও নেই, সেটা পত্রিকার খবরেই দেখা যাচ্ছে। যত লীগ আছে, সব লীগের কাজ এখন জমি দখল করা, টেন্ডারবাজি করা। এটা আমার কথা নয়, দৈনিক যুগান্তরের খবর। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তারা রাজপথে হামলা চালায়, কিন্তু তাদের ধরা হবে না। এরা মানুষ খুন করতে পারবে, সেই লাইসেন্স তাদের দেওয়া আছে। এখন নিরাপত্তার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার কাছে জাতি জানতে চায়, কীভাবে এদের হাতে অস্ত্র যায়? কেন এদের গ্রেফতার করা হয় না? জবাব দিতে হবে।
সম্প্রচার নীতিমালা করে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা : সম্প্রচার নীতিমালা করে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা চলছে মন্তব্য করে খালেদা বলেন, তারা যতো অন্যায় করুক সেসব যেন না লেখা হয়, এ জন্য এ নীতিমালা।
নিরপেক্ষ বিচারের পথ বন্ধে অভিশংসন আইন : বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার আইন করে বিচারকদের নিরপেক্ষভাবে বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, এই আইন পাশ করলেও তা বৈধতা পাবে না। এই আইন এজন্য করা হয়েছে, যেন শেখ হাসিনা যা বলবেন তাই শুনতে হবে। তারা নিজেদের মামলা তুলে নিয়েছে, আর আমাদের মামলাগুলো রয়ে গেছে, উপরুন্ত আমাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকারে যারা মন্ত্রী ছিল তাদের নামে গাড়ি চুরির মামলা দেওয়া হচ্ছে। কেন নিজের (শেখ হাসিনা) মামলা উঠিয়ে নিলেন? নিরপেক্ষ বিচার হলে দেখতাম আপনার কতো সাহস। আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার পরিবার কোনো অন্যায় করেনি।
খালেদা জিয়া বলেন, সারাদেশে বিএনপির জনসভায় মানুষের ঢল নামছে, মানুষ বিএনপির পক্ষে সমর্থন জোরদার করছে। তাই জনগণের দাবি আরও জোরালো হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কিন্তু তাদের (আওয়ামী লীগ) সেই সাহস নেই।
গোমর ফাঁস করেছেন তাদের ইমাম : এইচ টি ইমাম তাদের গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, তাদের ইমাম গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন, এইচ টি ইমাম। আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল এইচ টি ইমামের। তিনি সব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি বলে দিয়েছেন- কীভাবে নির্বাচনে কারচুপির সব ব্যবস্থা করেছিলেন তারা।
খালেদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত কথা বলার পরেও এইচ টি ইমাম ও তার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। পাকিস্তান আমলে দুর্নীতির অভিযোগে তার চাকরি গেছে। এখন তিনি আবারও দায়িত্ব পালন করছেন সরকারের। যত শয়তানি আর কুবুদ্ধির মাথা তিনি।