সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমের দৃশ্যপট অনেকটা বদলে গেছে। ডাক্তার ও নার্সরা এখন খুবই আন্তরিকতার সাথে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে এখন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের সংখ্যা ৩ জনের স্থলে ৬ জন করে রয়েছেন। এছাড়া,অনেক চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১০ শিশুর মৃত্যুর কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত পৃথক তদন্ত দল তাদের কার্যক্রমও শুরু করেছেন। তবে, হাসপাতালে চিকিৎসার মান বাড়লেও কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। এদিকে, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় আরো ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি শিশুও রয়েছে। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে হাসপাতালের ৫ম তলার ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, গত মঙ্গবারের চেয়ে এসব ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা কম। আগে যেখানে গাদাগাদি ছিল, গতকাল ছিলো অনেকটা ফাঁকা। কারণ, আতঙ্কিত রোগীদের নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়েছেন গত মঙ্গলবার দিন থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।
২২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি এক শিশু রোগীর মা বললেন, ‘চাইর (চার) দিন অইলো আমরা ইখানো। পাশর কেবিনে দুই বাচ্চা মারা যাওয়ার পরে অনেক রোগী ভয়ে কাগজ (ছাড়পত্র) না নিয়াই গেছোনগি। আমরাও যাইতে চাইছলাম, গেছিনা। কারণ, সকাল থেকে ভালা সেবা পাইরাম।’ শিশু ওয়ার্ডের একাধিক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্যদিন স্বাভাবিক ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হতো। কিন্তু দামি ইনজেকশন, এন্টিবায়োটিক এগুলো স্লিপে লিখে দিলে বাইরে থেকে কিনে আনতে হতো। এখন বদলে গেছে দৃশ্যপট। হাসপাতালেই দামি সব ওষুধ রোগীদের দেয়া হচ্ছে।
এদিকে,১০ শিশুর মৃত্যুর কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত দল তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে তদন্ত দল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে ওসমানী হাসপাতাল থেকেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তারা মারা যাওয়া ১০ শিশুসহ বাকি ২২ জন রোগীর কাগজপত্র ও ব্যবস্থাপত্র দেখেছেন। তদন্ত দল প্রথমে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিয়ার সাথে বৈঠক করেন। ১টার দিকে তারা হাসপাতালের ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর শিশু ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বেলা দুইটায় তদন্ত দলের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবির হোসেন রাব্বি গণমাধ্যমকে জানান, ‘২৪ ঘন্টায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছি। যেসব রোগী মারা গেছেন, তাদের কাগজপত্র ও ব্যবস্থাপত্র আমরা দেখেছি। এগুলোতে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’ প্রাথমিকভাবে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আবির বলেন, ‘তদন্ত চূড়ান্তভাবে শেষ হওয়ার পরই এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা যাবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’ এখন থেকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে আগত রোগীরা যেন আরো ভাল সেবা পান, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর মিঞা জানিয়েছেন, মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইসমাইল পাটোয়ারীর নেতৃত্বে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত দলও কাজ শুরু করেছে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এম এ সালাম বলেন, মন্ত্রণালয় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত দুটি কমিটিই একসাথে হাসপাতালের নানা বিষয় খতিয়ে দেখছেন। ২৩ জনের মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ বলেই ধরা হচ্ছে। তবে, এক সঙ্গে শিশু ওয়ার্ডের ১০ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না, তা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু হয়।